Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2020

নীল টগর

  নীল টগর (Pseuderanthemum laxiflorum). আমরা একে টগর বলি বটে, এ কিন্তু আদৌ টগর নয়, কোনোভাবেই নয়। পাতা কিছুটা টগরের মতো হলেও ফুল আদৌ টগরের মতো নয়। এর বোঁটা অনেক লম্বা। কুঁড়ি আলাদা, বৃতির গঠন আলাদা, ফুলের কেন্দ্রে পরাগধানী---- যার কোনোটিই টগরের নেই। অনেকে আবার একে শুটিং স্টার (Shooting Star) বলেন। কিন্তু শুটিং স্টার নামে সম্পূর্ণ অন্য একটি ফুল আছে। খসে পড়া তারা বা ছুটন্ত ধূমকেতুর মতোই দেখতে। ফুলের কেন্দ্র যেদিকে ফিরে থাকে, পাপড়িগুলি থাকে সব তার বিপরীতে, যেন ধূমকেতুর ঝাঁটা। সে ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Dodecatheon pulchellum. মোটকথা এই ফুল শুটিং স্টার নয়। এ ফুল বরং কিছুটা Purple False Erantheum-এর মতো। এর বৈজ্ঞানিক নামে আছে laxiflorum, যার অর্থ বিচ্ছিন্নভাবে ফোটা ফুল, ছাড়া ছাড়া ফুল। এ ফুলের থোকা হয় বটে, কিন্তু সেগুলি ছাড়া ছাড়াই বটে। আজকাল কার সাথে কাকে মিশিয়ে কি সব তৈরি হচ্ছে কে জানে! সে যাক। ফুল সুন্দর, ফুল পবিত্র। এবং তার চেয়ে বড় কথা ফুলটি আমার পত্নীর পছন্দের। তাই সে বাড়ছে আমাদের ছাদে। আমরা তাই দেখি। নীল টগর বা এমেথিস্ট স্টার বা পার্পল ড্যাজলার ফুল।

মালঞ্চ

ফুলের নাম মালঞ্চ (Alligator weed). কুমির ও এলিগেটারের মূল পার্থক্য হলো মুখ বন্ধ অবস্থাতেও সাধারণ কুমিরের নিচের পাটির দাঁতগুলি দেখা যায়, এলিগেটারের দেখা যায় না, কারণ তাদের ওপরের মাড়ি বেশ চওড়া যা নিচের মাড়িকে ঢেকে রাখে। কুমিরের এই দাঁত সম্পর্কিত আরেকটি মজার বিষয় হলো এরা ইচ্ছামতো দাঁত ঝরিয়ে দিয়ে নতুন দাঁত গজিয়ে তুলতে পারে। এই প্রাচীন সরীসৃপের পার্থক্য নিরূপণের কথা থাক। ফুলের কথা বলি। আমাদের বাড়ির কাছে কেদার নাথ মুখার্জি লেনের ছোট্ট খেলার মাঠটি এখনো জল থইথই, কাদা প্যাচপ্যাচ হয়ে আছে। সেই মাঠ জুড়ে গজিয়ে উঠেছে ঝলমলে সবুজ এই গাছগুলি। সেই সবুজে ছোট ছোট সাদা ফুলগুলি হওয়ায় দোলে যখন, মনে হয় সারা মাঠ যেন দুলে দুলে উঠছে। সেই হলো আসল মালঞ্চ। জলাজমির এই গাছটির নাম মালঞ্চ। ইংরাজিতে alligator weed. বৈজ্ঞানিক নাম Alternanthera philoxeroides. লম্বা ডাঁটির আগায় একটি করে যৌগিক সাদা ফুল ফোটে। ফুলের ওই সাদা অংশ আসলে মঞ্জরীপত্র (bract). সেগুলিই যেন এলিগেটারের সূচালো দাঁত। তারই ফাঁকে ফাঁকে ফোটে ছোট ছোট হলুদ রঙের ফুল। ফুলে আছে পাঁচটি পরাগধানী ও একটি গর্ভদন্ড। মালঞ্চের বীজ হয়। বীজ থেকে অজস্র চারা হয়।

গোখারু

গোখারু - Gokharu ( Crow thorn , Large Caltrops ) সমুদ্রের বালিয়াড়ি তে ঝোঁপ জাতীয় যে গাছ গুলো দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম এই গোখারু !! ঘন সবুজ চকচকে মোটা পাতা , ঝোপালো গাছ , লম্বা শিকর , বালিকে ধরে রাখে শক্ত করে !! সামুদ্রিক জীববৈচিত্রে অপরিহার্য প্রতিনিধি !! এর বিস্তার ভারতীয় উপকূল , শ্রীলঙ্কা , ইন্দোনেশিয়া থেকে সুদূর আফ্রিকা উপকূল বরাবর !! এই সময়ে ফুল ফোটার সময় , ঘীয়েটে সাদা ফুল , নাভীতে ক্রোমশ হলুদের গাঢ়ত্ব !! সবুজ পাতার মধ্যে দারুন লাগে ফুল গুলো !! এর সঠিক বাংলা নাম জানা নেই , তবে ভারতীয় বেশিরভাগ ভাষায় এর নামে গোখারু শব্দটি রয়েছে !! আছে এর অনেক আয়ুর্বেদিক গুন , প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে এর Brihat Gokshura নামে !! এর কচি পাতা শাক হিসেবে খায় স্থানীয় অধিবাসীরা !! এর পাতা ও শিকরের রসে আছে রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা , পুরুষত্ব বৃদ্ধিতে ব্যাবহার করা হয় এই গাছ , গনেরিয়া , মুত্রবর্ধক ঔষধ থেকে আরো অনেক রোগের ঔষধ তৈরি হয় এ গাছ থেকে !! আমাদের পূর্ব মেদিনীপুর এর উপকূলীয় অঞ্চলে ও অনেক দেখা যায় একে !! আর এই গোখারুর বিজ্ঞান সম্মত নাম - Pedalium murex .

নীল চিত্রক

এই ফুলটির নাম নীল চিত্রক (Plumbago auriculata). নীল চিত্রকের জমক নেই, স্নিগ্ধ সৌন্দর্য আছে; মনে ঢেউ তোলা দীপ্তি নেই, মনকে শান্ত করার উদ্ভাস আছে। ফুলের নাম- নীল চিতা বৈজ্ঞানিক নাম- Plumbago auriculata (syn. Plumbago capensis) পরিবার- Plumbaginaceae অন্যান্য নাম- Blue plumbago, Cape plumbago, Cape leadwort উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভুত এই গাছ সুন্দর নীল ফুলের জন্য লাগানো হয়ে থাকে। গাছটি ঝোপের সৃষ্টি করে এবং ১.৮ মিটার পর্যন্ত উচু হতে পারে। ফুল হালকা ও গাঢ় নীল হয়ে থাকে। সাদা রঙের চিতা ফুল ঔষধি গুন সম্পন্ন, তবে সব ধরণের চিতা গাছই বিষাক্ত। ছবি- নেট

কুসুম

  শিবপুরের বি ই কলেজে এই কুসুম গাছটি আমার বহু দিনের পরিচিত এবং বড্ড আপন। শুধু এই গাছটি দেখতেই আমি বারবার ছুটে গেছি ওর কাছে। কুসুম গাছে এখন কচি পাতা ধরেছে। সে পাতার রং টুকটুকে লাল। মনে হয় ফুলে ফুলে গাছ ভরে আছে। সেটিই তার শোভা। নতুন পাতায় সেজে ওঠা বসন্তের এই দিনগুলির জন্যই তার সারা বছরের প্রতীক্ষা। কচি পাতার সঙ্গে প্রতি অগ্রমুকুলে কুঁড়িও ধরেছে প্রচুর। কিন্তু কুসুমের ফুল উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। হলুদ রঙের গুঁড়িগুঁড়ি ছোট ফুল ফোটে। কুসুমের ইংরাজি নাম Ceylon oak বা এমনিই Kusum.আর বৈজ্ঞানিক নাম Schleichera oleosa. কোথাও কোথাও একে লাক্ষা গাছও বলা হয়। কারণ এর পাতায় কুসুমী লাক্ষার (Kerria lacca) গুটি ধরে। কুসুম একটি পাতাঝরা বৃক্ষ। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময়ই ঘন পাতায় চেয়ে থাকে, নিবিড় ছায়া দান করে। কুসুমের লম্বাটে গোল ফল ফলে। তার বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার নাম কুসুম তেল। সেই তেল চুলের পক্ষে খুব ভালো। জবাকুসম তেলের নাম আমরা সবাই জানি। তাছাড়া কুসুম তেল ত্বকের পক্ষেও খুব ভালো। নানান চর্ম সমস্যায়, এমনকি রিউমাটিজম এর ভালো ওষুধ। আমরা যে কুসুম বনস্পতির (vegetable oil) কথা জানি, সে অন্য গাছ। ঝোপের মতো সেই

Hawaiian Snowbush

ডগার কচি পাতাগুলি হালকা গোলাপি রঙের এই গাছটির নাম Hawaiian Snowbush. দূর থেকে হঠাৎ দেখলে নাকি মনে হয় গাছের ওপর বরফ পড়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্রেনিয়া ডিস্টিচা (Breynia disticha). Phyllanthus বা আমলা পরিবারের সদস্য এই গাছটি তিন চার ফুট উঁচু হয় এবং বারবার ছেঁটে দিলে সুন্দর বেড়ার কাজ করে। আমাদের দেশের কামিনীর যেমন। স্নোবুশও কামিনীর মতোই ঘন পত্রবহুল ও চিরসবুজ গাছ। তবে কামিনীর বেড়ার একটি বাড়তি লাভ হলো গাছে ফুল ফুটলে সুগন্ধ ও সৌন্দর্যের শেষ থাকে না। স্নোবুশেরও অবশ্য ছোট্ট ছোট্ট ফুল ফোটে। ফুলগুলি ভারী সুন্দর, প্রথমে সবুজ থাকে, পরে চাঁপা ফুলের মতো হলুদ রঙের হয়ে যায়। সে ফুল অবশ্য গন্ধহীন। স্নোবুশের ডালপালার রং প্রথমে সবুজ হলেও পরে গোলাপি ও আরো পরে লাল হয়ে হয়ে যায়। সে তখন আরেক শোভা।

বিচিত্রা

  শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের "বগেনভেলিয়া উদ্যান"-এ এই সুন্দর ফুলটির নাম বিচিত্রা। গাছে একই সঙ্গে তিন রঙের ফুল ফুটে আছে। বেগুনী, ল্যাভেন্ডার ও সাদা। ফুল ফোটার সময় রঙ থাকে গাঢ় বেগুনী, পরের দিন তা ফিকে হয়ে ল্যাভেন্ডারের রং হয়ে যায়। আর তার পরদিন হয় সাদা। তাই এর ইংরাজি নাম Yesterday Today and Tomorrow. এর অন্য দুটি মিষ্টি নাম হলো Kiss me quick বা Brazil raintree. ব্রাজিলে জন্মভূমি এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ব্রুনফেলসিয়া ক্যালিসিনা বা ব্রুনফেলসিয়া পসিফ্লোরা (Brunfelsia calycina/pauciflora). মধ্যযুগের জার্মান উদ্ভিদবিদ অটো ব্রুনফেলস (Otto Brunfels) এর নামে এর নামকরণ। বিচিত্রায় সারা বছরই ফুল ফোটে, কখনো কখনো ফুলে গাছ ভরে যায়। ফুলশূন্য অবস্থায় গাছটিকে চেনাই মুশকিল। সাধারণ সবুজ পাতার গাছ, ৫/৭ ফুট উঁচু ঝোপের মতো দেখতে লাগে। কলকাতায় মোহরকুঞ্জে, হর্টিকালচারে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে অনেক বিচিত্রা আছে।

বন মরিচ

পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে দেখা যায় --- এই আগাছাটি প্রায় সকলেরই চেনা। যে কোনো ছায়াছন্ন জায়গায় এরা নিজে নিজেই জন্মায়। বীজ রেখে গাছ মোড়ে যায়। পরে অনুকূল পরিবেশে আবার নতুন চারা জন্মায়। গাছটির নাম (বাহারি পাতা) বন মরিচ। ইংরাজি নাম Blood berry বা Pigeon berry. বৈজ্ঞানিক নাম Rivina humilis (variegated). রিভিনার দুটি প্রজাতি এদেশে দেখা যায়; একটির ফুলের রং পিঙ্ক, তার ফলের রং লাল। অন্যটির ফুল সাদা, তার ফল হলুদ। গাছটির মাতৃভূমি মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। এখন সারা ভারতে একে পাওয়া যায়। তাই বন মরিচকে এদেশেরও গাছ বলে যায়। বন মরিচ ফল মানুষের খাদ্য নয়। এর রঙিন ফলে উপস্থিত রঞ্জন কণার নাম রিভিয়ানিন বা রিভিনিয়ানিন (rivianin or rivinianin). অতীতে তা থেকে রং ও পেনের কালি তৈরি করা হতো। এখন অনেক সহজলভ্য বিকল্প বাজারে এসে গেছে, তাই রিভিনার আদর গেছে। তা যাক। প্রকৃতি কিন্তু তার ফুলগুলিকে সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করেনি। তারা আজও আগের মতোই সুন্দর, আগের মতোই বর্ণময়।

শ্বেতা

গাছের পাতা আম পাতার মতো। কিন্তু ফুল আমের মঞ্জরীর মতো নয়, বরং কুর্চি বা কাঠচাঁপার মতো। এই সুগন্ধী ফুলটির নাম শ্বেতা (Kopsia arborea). ইংরাজি নাম পেনাং স্লো (Penang Sloe). ডাচ শব্দ slee থেকে নিষ্পন্ন একটি ইংরাজি শব্দ হলো স্লো (sloe) যার অর্থ কালচে নীল। শ্বেতার ফলগুলি পাতলা খোসা কালচে নীল রঙের আঙুরের মতো। আর পেনাং (Penang) হলো মালয়েশিয়ার একটি রাজ্য যেখানে এই ফুলটি পাওয়া যায়। দুইয়ে মিলে গাছের নাম পেনাং স্লো (Penang Sloe).

পিঙ্ক গার্ডেনিয়া

বৃষ্টিতে ভিজলে কি ফুলের কষ্ট হয়? কি জানি। শক্তি চট্টোপাধ্যায় আনন্দ ভৈরবীর কথায় লিখেছেন, বরষা-পীড়িত ফুল। এই ফুলগুলি পীড়িত নয়, বৃষ্টিতে ভিজে সতেজ, সুন্দর লাগছে। এরা হলো "ডাকুর" ফুল, কেউ বলেন কাঠ মালতী। ইংরাজি নাম পিঙ্ক গার্ডেনিয়া। বৈজ্ঞানিক নাম Kopsia fruticosa. গাছে ফুল না থাকলে শুধু পাতা দেখে চেনা সহজ নয় এ গাছ গন্ধরাজ নাকি রঙ্গন নাকি মুসান্ডা।

প্যাঞ্জি

  আমি যতবারই সাদা জামা কিনেছি, একটা কথা বারবার শুনতে হয়েছে, সাদার ওপরে আর কিছু হয়না বুঝলে ফাল্গুনী, কিন্তু মেন্টেন করা খুব মুশকিল, যা ধুলো এখানের হাওয়ায়। বড় হয়েও যখনই সাদা জামা পরে অফিসে গেছি, একই কথা শুনতে হয়েছে। তবে সাদা জামা পরলে আজও সবসময়ই নিজেকে স্কুলের ছাত্র, স্কুলের ছাত্র মনে হয়, শৈশবটা যেন ফিরে আসে। স্কুলে পড়তাম যখন, স্কুল ড্রেসের সাদা সুতির জমায় নীল দেওয়ার চল ছিল। কাপড়ের পুঁটলিতে নীলের টুকরো বেঁধে জলের মধ্যে একটুখানি খলরবলর করলেই জল নীল হয়ে হয়ে যেত। (সেই সঙ্গে হাতের দুটো তিনটে আঙুলও নীল হয়ে যেত। বন্ধুরা দেখতে পেলেই বলতো, কিরে, নীল দিয়েছিস?) তারপর সেই নীল জলে ডুবিয়ে নিলেই জামা নীল হয়ে যেত। কিন্তু কাজটা বলতে যত সহজ, করা ঠিক তত সহজ নয়। আমি আজ অবধি কোনোদিন সঠিকভাবে জামায় নীল দিতে পারিনি। একেকবার এমনও হয়েছে, জামার রংটাই বদলে গেছে। তখন বারবার সাদা জলে ধুয়ে ফিকে করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিশেষ লাভ হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তাছাড়া ছিল ছোপ ছোপ দাগ হয়ে যাওয়া। জলে নীল যত ভালো করেই মিশিয়ে নিই না কেন, প্রায়শঃই দেখা যেত জামায় হায়েনার গায়ের মতো ছোপ পড়ে গেছে। সে ছিল এক ভীষণ গোলমেলে ব্যাপার। নীল দ

পার্শিয়ান বাটার কাপ।

আমার মেয়ের বিয়ের তত্ত্বের মিষ্টি আমি পছন্দ করিনি। ময়রা বলেছিল, কাকা, আমার ওপর ছেড়ে দিন। বোনের বিয়ে বলে কথা, নিন্দে হতে দেবো না। ছেড়ে দিয়েছিলাম। খুব সুখ্যাতি হয়েছিল মিষ্টির। আমার বন্ধু আবার একধাপ এগিয়ে বলেছিল, ওদের "হারিয়ে" দিয়েছিস। হারজিতের কথা থাক। সেই তত্ত্বে একটি মিষ্টি ছিল খাজা। অসংখ্য পাপড়ির একটি ফুলের মতো। যেমন অনন্য দেখতে, নিশ্চই স্বাদেও তেমনি হয়েছিল। হালকা ফুলফুলে, খেতে মুচমুচে, আর মিষ্টি একদম ব্যালেন্সড, যাতে দু'চারটি খেয়ে নিলেও মুখ মেরে দেয় না। খাজা দেখলেই জিভে জল আসে। এই সুন্দর ফুলটি সেই খাজার মতো। এ কিন্তু খাস্তা মুচমুচে মোটেও নয়, বরং নরম তুলতুলে। পাপড়িগুলি যেমন ঝকঝকে তেমনি মসৃণ, তেমনি রঙের জেল্লা, যেন আলো ঠিকরে আসে, রোদের মধ্যে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। এই গাছটির নাম পার্শিয়ান বাটার কাপ। এর বৈজ্ঞানিক নাম রেনানকুলাস এশিয়াটিকাস (Ranunculus asiaticus). রেনানকুলাস বাল্ব বা টিউবার থেকে যেমন হয়, তেমনি হয় বীজ থেকে। কিন্তু বীজ এক বছর বাড়িতে রাখা প্রায় অসম্ভব। বরং টিউবার রাখা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় শীতকালে বাজারে ফুলওলার কাছ থেকে চারা কেনা। তাকে ছবি দেখালেই এনে দেবে।

জোনাকি

এদের উপেক্ষা করা সহজ নয়। কিছুতেই তুলে ফেলতে পারিনা। ফুলের টবে অবাঞ্চিত জোনাকি ফুল। ইংরাজি নাম Scarlet pimpernel. মজার নাম Poor man's barometer, রৌদ্রোজ্জ্বল ঝলমলে দিন না হলে এই ফুল তার পাপড়ি মেলে না। জোনাকির বৈজ্ঞানিক নাম Anagallis arvensis.

stock

তখন সদ্য দুর্গা পূজা মিটেছে। সেদিন রোব্বার, সাত সকালে বিদ্যুৎদা এসে হাজির। বললেন, তোর স্কুটারটা বার কর তো, কলকাতায় যাবো। বিদ্যুৎদার খুব ফুল গাছের শখ। ঘুরে ঘুরে ফুলের গাছ কিনে বেড়ায়। গ্যালিফ স্ট্রিটের অনেকেই বিদ্যুৎদাকে চেনে। তেমনি একটি ছেলেকে বললেন, স্টক কই, স্টক আনিসনি? ছেলেটি কাঁচুমাচু হয়ে বলল, স্টক আপনার হাওড়ায় বাঁচবে না, স্টক আপনাকে দেবো না। বিদ্যুৎদা অদ্ভুত একটা মুখভঙ্গি করে বললেন, সক্কালবেলাতেই বাংলা খেয়ে এসেছিস? হাওড়ায় বাঁচে না মানে? কি বলছিস তুই? জানা গেল গতবার অনেক রঙের স্টক নিয়ে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎদা, কিন্তু একটি গাছেও সেবার ফুল আসেনি। বিদ্যুৎদা গিয়ে ছেলেটিকে মারতে বাকি রেখেছিলেন, শালা শুয়ার, জালি মাল বেচেছ আমায়! এত যত্ন করলাম, একটাতেও ফুল এলো না? জেদ চেপেছে, এবারও স্টক কিনবেন। ছেলেটি নিজের গাছে আস্থা রাখতে পারলো না, দূরে আরেকজনের কাছ থেকে ক'টি চারা এনে দিয়ে বললো, এখন কিছু দিতে হবে না, ফুল হলে দাম দেবেন। বিদ্যুৎদা বললেন, আর না হলে? আমার পরিশ্রমের দাম নেই? আমি শান্ত করলাম। গাছ নিয়ে ফেরার পথে জিজ্ঞাসা করলাম, স্টক কিরকম ফুল গো? স্টক বানান কি? বিদ্যুৎদা বললেন, বলতো কি বানান? বল

ইস্টার লিলি

Foyer শব্দটির উচ্চারণ হয় ফয়েই। কোনো অফিস বা হোটেলে ঢুকলে সামনেই যেখানে রিশেপসনিস্ট বসেন, সেই খোলা জায়গাটির নাম ফয়েই। আমাদের অফিসের ফয়েই-এ রাখা সোনার মতো ঝকঝকে পুষ্পপাত্রে এগুলি ইস্টার লিলির ফুল। ইস্টার লিলির যেমন রূপ, তেমনি সুগন্ধ। অতবড় ৬০০/৭০০ বর্গফুট জায়গা সৌরভ সুগন্ধে মাতিয়ে রাখে সারাক্ষণ। সে সুবাসের পরিমিতি এমনিই, কখনোই তা একঘেয়ে লাগে না। মিষ্টতা তার এমনিই সূক্ষ, কখনোই চড়া লাগে না। আর রূপ, সে তো শুধু দেখেই যেতে হয়। ওর পরতে পরতে রহস্য, তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে অজানার উদ্ভাস। ফুলের কুঁড়ি লম্বাটে, রঙে সবুজ। যত ফোটার সময় এগিয়ে আসে, কুঁড়ির রঙ ফিকে হতে হতে একসময় সাদা হয়ে যায়। পাপড়ি মেলার সময় হলে দলশীর্ষ ভেদ করে প্রথমেই বেরিয়ে আসে অতি মিহি স্বচ্ছ আস্তরে মোড়া গর্ভমুন্ডটি। তার আগায় তিনটি সূক্ষ আধার। সেখানেই এসে পড়ে পরাগরেণু। পাপড়িগুলি একটু উন্মোচিত হলেই দেখা যায় ভিতরে ছটি পুংদন্ড। প্রতিটির মাথায় আলতো করে বসানো একটি করে দুই প্রকোষ্ঠের ক্যাপসুলের মতো পরাগধানী (anther). এদের ভিতরে থাকে চারটি থলির মতো অঙ্গ (microsporangia) যেখানে পরাগ সৃষ্টি হয়। একটু পরেই পরাগধানীগুলি স্ফীত ওঠে এবং তাদের সারা গা ভরে

গুস্তাভিয়া (অগাস্টা) বা দাদরা

  গতকাল একটি গুস্তাভিয়া (অগাস্টা) বা দাদরা ফুলের ছবি পোস্ট করেছিলাম। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, সেই ফুল ও ম্যাগনলিয়া একই ফুল কিনা। আমার উত্তর, না, তারা একই ফুল নয়। তারা দুটি ভিন্ন গাছ, তাদের পরিবার, গোত্র সব আলাদা। বোঝার সুবিধার জন্য ফুল দুটির ছবি দিলাম। প্রথমটি গুস্তাভিয়া, দ্বিতীয়টি ম্যাগনলিয়া। প্রথম ছবি শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে তোলা, দ্বিতীয় ছবি কলকাতায় মহীশূর উদ্যানে তোলা। সুধী পাঠক, ফুলের গর্ভচক্রের গঠন ও অবস্থান লক্ষ্য করে দেখুন, তাহলে সহজেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। দাদরা বা স্বর্গের পদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম Gustavia augusta. এটি Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। ইংরাজি নাম Heaven lotus. উদয়পদ্ম বা হিমচাঁপার বৈজ্ঞানিক নাম Magnolia grandiflora. এটি Magnoliaceae পরিবারভুক্ত। ইংরাজি নাম Southern magnolia বা Great laurel magnolia. আশাকরি এতে দ্বিধা কাটবে।

আইসল্যান্ড পপি

শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে খুব পরিচিত এই পপি ফুলটির ডাক নাম আইসল্যান্ড পপি। তবে মজার কথা এই ফুলটি আইসল্যান্ড-এ ফোটে না। আইসল্যান্ড নামটি রাখা হয়েছে এটুকু বোঝানোর জন্য যে এটি মেরুবৃত্তের কাছাকাছি অঞ্চলে শীতের দেশে ফোটে। কিন্তু কিছুতেই সাড়ে ছেষট্টি ডিগ্রি অক্ষাংশের ওপরে ফুটতে পারে না। এর বৈজ্ঞানিক নাম Papaver nudicaule.

কুড়ুই / কড়ুই, বা গৌরনিতাই বা কুরুবক

এই ফুলটির নাম কুড়ুই / কড়ুই, বা গৌরনিতাই বা কুরুবক। ভালো নাম Malabar False Eranthemum. ছবিতে পাশাপাশি তিনটি ফুল ও দূরে একটি কুঁড়ি দেখা যাচ্ছে। ফুল তিনটি পরাগ মিলনের তিনটি স্তরে অবস্থান করছে। বাঁদিকের ফুলটি তরুণতম, আজই ফুটেছে; মাঝেরটি একদিন আগের, আর ডানদিকেরটি তার আগের দিনের ফোটা। প্রথম ফুলটির পরাগধানী একটি লম্বাটে মৌরি লজেন্সের মতো। তা লম্বালম্বিভাবে (longitudinally) উন্মুক্ত হয়েছে, মিলনের জন্য প্রস্তুত। ওর ভিতরের গায়ে আছে সমান্তরাল কয়েকটি rib, তা পরাগ সৃষ্টি করতে ও পরাগ গ্রহণ করতে সক্ষম। প্রয়োজন শুধু একটি পতঙ্গের বা একটু বাতাসের। দ্বিতীয় ফুলটির পরাগমিলন সদ্য সমাপ্ত হয়েছে। তার পরাগধানী বৃন্তের রঙ সাদা থেকে সবুজ হয়েছে এবং ফুলটি এখনো সম্পূর্ণ ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তার অন্তরে চলছে দ্রুত পরিবর্তন। শেষ ফুলটির মর্ত্যে আগনমের কাজ সমাপ্ত। এখন সে ঝরে পড়ার অপেক্ষায়। কমল দাশগুপ্তের একটি গানে আছে, " চাঁদ কহে সুদূরে আমি, মোর প্রেম-জোছনা সে কেঁদে মরে তব পাশে, ওগো ফুল, কেমনে নামি। চামেলি কহিল তবে, আমি যাই দূর নভে ঝরিল সে পথের ধারে।" ফুল ঝরে যাওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়, ইহ জগতের লয় বটে,

গোল্ডেন রেড পেন্ডা

  গোল্ডেন রেড পেন্ডা। এই সুন্দর ফুলটির স্বাভাবিক রং হয় সোনার মতো। তার নাম গোল্ডেন পেন্ডা (Penda). কিন্তু এই ফুলটি হাইব্রিড, এর রং লাল। তাই সোনার বরণ না হয়েও এর নাম গোল্ডেন রেড পেন্ডা। আফ্রিকার সোয়াহিলি (Swahili) ভাষায় পেন্ডা শব্দের অর্থ ভালোবাসা (love). অর্থাৎ সোয়াহিলি ভাষায় ফুলের নামের অর্থ সোনার ভালোবাসা। সাহেবরা এর নাম দিয়েছেন ফার্স্ট লাভ, প্রথম প্রেম। বৈজ্ঞানিক নাম Xanthostemon chrysanthus. প্রথম প্রেমের একটি সত্যি গল্প বলি। আমার সেজ জ্যাঠাইমার ছোট ভাইয়ের নাম ছিল চন্দন রায়চৌধুরী, ডাক নাম ছেল্টু। আমার চেয়ে ক'বছরের বড়, কিন্তু খুব বন্ধু। আমি কখনো বলতাম মামা, কখনো ছেল্টুদা, আবার কখনো শুধুই ছেল্টু। কি লক্ষ্মী, কি ভালো ছেলে ছিল সে। যে নামেই ডাকি না কেন, ঠিক সাড়া দিতো। শিবপুর বাজারে বেণী মিত্তির লেনের কাছে তখন উদয় স্টোরস নামে ছোট্ট একটি স্টেশনারী দোকান ছিল। খাতা, পেন্সিল, কালি, কলম, চাম কাগজ সব পাওয়া যেত সেখানে। এবং সবই ছিল সেরা জিনিস। ছেল্টু সেই দোকানের খাতা পেন কিনতো। খাতার মলাটে রবার স্ট্যাম্পে ছাপ দেওয়া থাকতো, উদয় স্টোরস। ছেল্টুর হাতের লেখা ছিল দেখার মতো। সব খাতায় নির্দিষ্ট জায়গায়

সাদা মুসান্ডা বা ফিলিপ্পিকা ডোনা অরোরা

এই ফুলটির নাম সাদা মুসান্ডা বা ফিলিপ্পিকা ডোনা অরোরা। এর কথা বলি। মুসান্ডা (Mussaenda) এমন একটি ফুলের গাছ যা তার ফুলের জন্য নয়, বাগানে লাগানো হয় তার মঞ্জরীপত্রের (bracts) সৌন্দর্যের জন্য। শাখার আগায় পুষ্পমুকুল আসার আগেই মঞ্জরীপত্রগুলি পরিণত হয়ে যায়। এদের অনেক কাজ; পুষ্পমঞ্জরীকে রক্ষা করা তো আছেই, আছে তার সুন্দর রঙ দিয়ে পতঙ্গকে আকৃষ্ট করা, বিষ নিঃসরণ করে চরে বেড়ানো প্রাণীর হাত থেকে গাছ ও ফুলকে রক্ষা করা। ফিলিপিন্সে জন্মভূমি রুবিয়াসিয়া পরিবারের সদস্য এই সাদা মুসান্ডার আর একটি নাম ফিলিপ্পিকা ডোনা অরোরা (Mussaenda philippica Aurorae) (ফিলিপিন্সের এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি Manuel L. Quezon (1878 – 1944)-এর পত্নীর নাম ছিল ডোনা অরোরা। তাঁরই নামে ফুলটির নাম)। এর আরো সুন্দর সুন্দর নাম আছে; ব্যাঙ্কক রোজ, Buddha’s Lamp, Tropical Dogwood ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে মজার নামটি হলো ভার্জিন ট্রি (Virgin Tree). ভার্জিন ট্রি নাম কেন হলো সেই গল্প বলি। বেথেলহেমের আস্তাবলে যীশু জন্মগ্রহণ করবেন সেই খবর পেয়ে ম্যাজাইরা এসে তাঁকে আশীর্বাদ করে চলে চলে যাবার পরেই এক দেবদূতের আবির্ভাব হলো। তিনি জোসেফকে বলে গেলেন অবিলম্বে ক

"এক নিঃশ্বাসের প্রেম" (Love-in-a-puff)

  শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই সুন্দর ফলটির কি এক অদ্ভুত নাম, "এক নিঃশ্বাসের প্রেম" (Love-in-a-puff) (বা Heartseed বা Heartpea. হিন্দিতে বলে কানফাটা।) খানিকটা টমেটো গাছের পাতার মতো পাতাওলা এই লতানে গাছটির নাম লতাফাটকারী বা Balloon Vine. সংস্কৃত নাম ইন্দ্রবল্লী বা জ্যোতিষ্মতী। ঘাসের মাঝে আগাছার মতো বেড়ে চলে, কোনো অবলম্বন পেলে বেয়ে উঠে পড়ে। এর বৈজ্ঞানিক নামটি ভয়ঙ্কর, কার্ডিওস্পারমাম হ্যালিকাকাবাম (Cardiospermum halicacabum). আর জেনে কাজ নেই। বরং ফলটি দেখি আমরা। গ্রীষ্মের শুরুতে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। ফুল ঝরে গিয়ে তিন প্রকোষ্ঠের অজস্র ফল ধরে। প্রতি প্রকোষ্ঠে দুটি করে সবুজ বীজ হয়। বীজ পেকে কালো হয়ে ঝরে পড়ে নতুন গাছ জন্মায়। ফলগুলি দেখতে ভারী সুন্দর। পাতার কক্ষে এক বৃন্তে দুটি করে ফল ধরে। কচি ফলের গাল গুলি সাহেবদের মতো লাল। আশ্চর্য।

বিদায় বসন্ত

  উত্তর আমেরিকায় মাতৃভূমি এই অপূর্ব সুন্দর ফুলটির বাংলা নাম বসন্ত বিদায় বা বিদায় বসন্ত। ইংরাজি নাম Farewell to Spring বা গডেশিয়া (Godetia). আর বৈজ্ঞানিক নাম Clarkia amoena. কলকাতার আবহাওয়ায় অক্টোবরের মাঝামাঝি গাছ বসালে শীতের শুরুতেই ফুল ফুটতে শুরু করে। অনেক রঙে পাওয়া যায়। তাদের সবার আবার বাহারি বাহারি নাম আছে। (যে কোনো নার্সারীতে পাওয়া যায়, বা পাড়ার ফুলওলাকে গডেশিয়া নাম বললে বা মোবাইলে ছবি দেখালে  এনে দেয়, গাছ প্রতি ১৫/২০ টাকা দাম নেয়। প্রচুর রোদ আর অল্প জলেই গাছ ভালো থাকে। সরষে খোলের পচা ঝাঁঝহীন জল চলে।) বাই কালার বসন্ত বিদায়-এর সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। ফুটন্ত ফুলের সামনে পাটি পেড়ে বসে থাকতে হয়, আর ফুল কেমন করে বৃতির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে একটু একটু করে চোখ মেলে সেই দৃশ্য দেখে যেতে হয়। আহা, তা কি ভাষায় বলার জিনিস! বসন্ত বিদায়ের পাপড়িগুলি ফিনফিনে পাতলা। রোদের আলো যেন সে পাপড়ি চুঁয়ে গড়িয়ে পড়ে ওর বুকে। পপির কথা মনে পড়ে যায়। ফুলের বুকে আছে দশটি পুংদন্ড, আর তাদের মধ্যমণি একটি চার মাথা গর্ভদন্ড। ফুলটি যখন হওয়ায় দোলে, গর্ভদন্ডটি নুয়ে পড়ে ফুলের বুকে, কচি ছেলেমেয়ে যেমন করে মায়ের বুকে মু

সাদা রেন লিলি

  সাদা রেন লিলির ভালো নাম জেফাইরান্থাস ক্যান্ডিডা (Zephyranthes candida). এর জন্মভূমি পেরু দেশের জলাভূমিতে। তাই এর ডাকনাম Peruvian swamp lily. ফুলটি বৃষ্টির আঘাতে নুয়ে পড়েছিল, বুজে গিয়েছিল। বৃষ্টি ধরতেই, একটু আলো ফুটতেই আবার চোখ মেলে সোজা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুকুরের ঢালে নরম কচি সবুজ ঘাসের মধ্যে হাজার হাজার রেন লিলি ফুটে থাকে যখন, সে এক অপরূপ শোভা। ছোট ছোট পতঙ্গে এর পরাগমিলন ঘটায়। ফুল ফোটার পর বৃষ্টি এসে গেলে, পতঙ্গ যখন আর আসতে পারে না, জলে ধোয়া পরাগরেণু আপনিই এসে পড়ে গর্ভদণ্ডের আগায়, সম্পন্ন হয় মিলন। মজার কথা, ফুল ফোটার আগে বৃষ্টি এসে গেলে, ফুল তখন আর পাপড়ি মেলে না। কারণ পরাগরেণু তখনও অপরিণত থাকে, তা দিয়ে মিলন সম্ভব হয় না। বরিষণে বিরতি হলেই দ্রুত ফুল ফুটে উঠে পতঙ্গের জন্য প্রতীক্ষা করে। ছবিতে রেন লিলির অন্দরমহলে এসে পড়েছে একটি ঘোড়া গুলঞ্চ লতা। কি সুন্দর তার পাতাগুলি। এর ফুলও ভারী সুন্দর, জার্মানী লতার ফুলের মতো থোকা হয়ে ফোটে।

স্বাগত বসন্ত Godetia

  উত্তর আমেরিকায় মাতৃভূমি এই অপূর্ব সুন্দর ফুলটির বাংলা নাম হওয়া উচিত Welcome Spring বা স্বাগত বসন্ত, কারণ শীতের কুণ্ঠা, জড়তা কাটিয়ে এ-ই নাকি প্রথম ঘুম ভেঙে বসন্তকে বরণ করে নেয়। এর রঙে তাই এত জেল্লা, এত জমক। রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে, "মধুর তোমার শেষ যে না পাই।" এতই সুন্দর, এতই রূপবতী এই ফুল। গাছ ভরে ফুল ফোটে যখন, তখন খেয়াল করলে দেখা যায় একেকটি ফুল এক এক অবস্থায় আছে। কেউ সদ্য কুঁড়ির বাঁধন মুক্ত হয়ে চোখ মেলছে, কেউ মুক্ত হয়েছে তবু আলস্যভরে তখনও চোখটি মেলতে কুন্ঠিত, আবার কেউ পাপড়ি উন্মোচিত করেছে বটে, গর্ভচক্রের বিকাশ ঘটায় নি তখনও। আর যারা পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়েছে, তারা হওয়ার দোলায় দুলছে, মৌমাছির জন্য পেতে দিয়েছে তার বুক, নন্দিত পদসঞ্চারে সে আহরণ করে নিচ্ছে সৃষ্টির যত রহস্য। আমি শুধু দেখে যাই।

আ‍্যলামান্ডা' (Allamanda)

  আমরা মোটামুটি সকলেই 'আ‍্যলামান্ডা' (Allamanda) ফুল দেখেছি, আমার বাড়ির মত অনেকের বাড়িতেই এই লতানে গাছটা শোভাবর্ধন করে রয়েছে। এবার উঃবঙ্গের 'ঝালং' বেড়াতে গিয়ে এই গাছের ফল চোখে পড়ল। আগে কখনো আ‍্যলামান্ডার ফল চোখে পড়ে নি, হয়'ত অনেকেই দেখে থাকবেন, কিন্তু আমার কাছে এটাই প্রথম দেখা।

দই গোটা বা লটকন বা সিঁদুরী

  দই গোটা বা লটকনের কুঁড়ি, ফুল, কাঁচা ও পাকা ফল ও ফলন্ত গাছের বিবরণ : এই গুল্মটির নাম দই গোটা বা লটকন বা সিঁদুরী। গাছ এখন টুকটুকে লাল ফলে ভরে আছে। শুকনো ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে পাউডার বা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে হাতে ঘষলেই জৈব সিঁদুর পাওয়া যায়। গাছটির ইংরেজী নাম Lipstick Tree. বৈজ্ঞানিক নাম Bixa orellana. ৮/১০ ফুট উঁচু গাছটিতে অক্টোবরে ফুল ফোটে। এর কুঁড়ি টুকটুকে লাল, কিন্তু ফুল হালকা গোলাপি রঙের এবং দেখতে অনেকটা জামরুল, পেয়ারা ইত্যাদি ফুলের মতো। ফুল ঝরে গেলে নরম কাঁটাওলা থোকা থোকা সবুজ ফল ধরে। ফলগুলি পেকে উজ্জ্বল লাল হয়ে যায়। গাছের প্রতিটি শাখায় তখন রঙের খেলা। দূর থেকে দেখে মনে হয় কোনো ফুল ফুটেছে। দই গোটার বীজ রঞ্জক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া ইত্যাদি দেশের আদিবাসীরা তাদের শরীর রাঙানোর জন্য এর বীজ বেটে বা তেলে বা জলে ফুটিয়ে কমলা-লাল রঙ নিষ্কাশন করে। সেই রঙ আবার লিপস্টিক ও নানান খাবারেও মিশিয়ে রঙিন করা হয়। আমাদের দেশে দই, মাখন, চীজ, পপকর্ন, কেক ইত্যাদি রঙ করতে সেই রঙ ব্যবহার করা হয়। এর বীজ খাবারে flavour আনার জন্যও ব্যবহার করা হয়। বীজকে ঘিরে থাকে লিচুর মতো শাঁস (aril), যা রঙ

উচুন্টি _ Billy Goat Weed

  বাংলায় উড়োনচন্ডী বা উড়োনচন্ডে বলে একটি শব্দ আছে। ইংরাজিতে বললে, extravagant. সেকথা থাক। এই গাছটির নাম উচুন্টি বা দুচুন্টি। এখানে বিহারীরা বলেন বন পুদিনা। ইংরাজিতে Billy Goat Weed. এটি একটি আগাছা। আমাদের বাড়ির পিছনের পাঁচিলে নিজে নিজেই জন্মায়। বর্ষায় গাছের পাতা সবুজ, কিন্তু শীতে হলুদাভ। ফুলের রং পার্পল বা সাদা। ফুলগুলি সুন্দর। থোকা হয়ে ফোটে। প্রজাপতি আসে মধু খেতে। উচুন্টির বৈজ্ঞানিক নাম Ageratum conyzoides. গাছটি আগাছা হলেও এর কত যে ঔষধী গুণ তা বলে শেষ করা যায়না। উচুন্টি পাতার রস আমাশয়ের খুব ভালো ওষুধ। বেশি জ্বরেও এর রস খুব কাজে দেয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতেও এই রস ব্যবহৃত হয়। কালশিটে পড়ে ফুলে গেলে উচুন্টির রস খুব দ্রুত তা কমিয়ে দেয়। উচুন্টির শুকনো পাতা কীটনাশক। আলমারিতে দিয়ে রাখলে কাপড়ে পোকা লাগে না।

সেতবা

  শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এই ফুলটির চলতি নাম সেতবা। ভালো নাম স্বর্গের পদ্ম (Heaven lotus). আর, বৈজ্ঞানিক নাম Gustavia augusta. তৃতীয় গুস্তাভাস (Gustavus III) ছিলেন সুইডেনের এক রাজা। এক রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহে জয়ী হয়ে ১৭৭১ সালে তিনি রাজা হন। রাজতন্ত্রের বহু কুফল দমন করে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ১৭৯২ সালে গুপ্ত ঘাতকের হাতে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই গুস্তাভাস আবার ছিলেন একজন পুষ্পপ্রেমী। তাঁর মৃত্যুর পর এই গাছটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়। বোটানিক্যাল গার্ডেনে Anderson Avenue ও Dyer Avenue এ এই গাছ কয়েকটি আছে। এখন ফুলের সময় নয়, তবু গাছটিতে অনেক ফুল ফুটেছে। আবহাওয়ার কি সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে তা বলার নয়। এই ভরা বর্ষায় বাগানে গাছ ভরে বসন্তের হলুদ ফুল টাবেবুইয়া ক্রিসন্ন্থা ফুটেছে। ফুল দেখে আমার একটুও আনন্দ হয়নি, দুর্ভাবনায় মন অস্থির হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় কবে যে আমরা সচেতন হবো! সে যাক। গুস্তাভিয়ার কথা বলি। এই ফুল অগ্রমুকুলে যেমন হয়, তেমনি মোটা কাণ্ডের গায়েও হয় থোকা হয়ে। বাগানে আরো দুইরকমের গুস্তাভিয়া আছে, গ্রাসিলিস ও ইনসিগনিস। গুস্তাভিয়া সুগান্ধী ফুল। এর পাপড়ির বিন্যাস অনেকটা উদয় পদ্মের মতো। ফুলের সাতটি/আটটি