আমি যতবারই সাদা জামা কিনেছি, একটা কথা বারবার শুনতে হয়েছে, সাদার ওপরে আর কিছু হয়না বুঝলে ফাল্গুনী, কিন্তু মেন্টেন করা খুব মুশকিল, যা ধুলো এখানের হাওয়ায়।বড় হয়েও যখনই সাদা জামা পরে অফিসে গেছি, একই কথা শুনতে হয়েছে। তবে সাদা জামা পরলে আজও সবসময়ই নিজেকে স্কুলের ছাত্র, স্কুলের ছাত্র মনে হয়, শৈশবটা যেন ফিরে আসে।
স্কুলে পড়তাম যখন, স্কুল ড্রেসের সাদা সুতির জমায় নীল দেওয়ার চল ছিল। কাপড়ের পুঁটলিতে নীলের টুকরো বেঁধে জলের মধ্যে একটুখানি খলরবলর করলেই জল নীল হয়ে হয়ে যেত। (সেই সঙ্গে হাতের দুটো তিনটে আঙুলও নীল হয়ে যেত। বন্ধুরা দেখতে পেলেই বলতো, কিরে, নীল দিয়েছিস?)
তারপর সেই নীল জলে ডুবিয়ে নিলেই জামা নীল হয়ে যেত। কিন্তু কাজটা বলতে যত সহজ, করা ঠিক তত সহজ নয়। আমি আজ অবধি কোনোদিন সঠিকভাবে জামায় নীল দিতে পারিনি। একেকবার এমনও হয়েছে, জামার রংটাই বদলে গেছে। তখন বারবার সাদা জলে ধুয়ে ফিকে করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিশেষ লাভ হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
তাছাড়া ছিল ছোপ ছোপ দাগ হয়ে যাওয়া। জলে নীল যত ভালো করেই মিশিয়ে নিই না কেন, প্রায়শঃই দেখা যেত জামায় হায়েনার গায়ের মতো ছোপ পড়ে গেছে। সে ছিল এক ভীষণ গোলমেলে ব্যাপার।
নীল দেওয়া সুতির জামা রোদে দিলে আরেক কান্ড হতো। তারের যেদিকে রোদ পড়তো, জামার সেদিকটা সাদা হয়ে যেত। স্কুলে বন্ধুরা বলতো, হিন্দুস্তান-পাকিস্তান।
নীলের সঙ্গে শরীরের ঘামের কি রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় কি জানি। জামা একদিন গায়ে দেবার পরেই দেখা যেত পিঠের দিকে হাতের ডানার কাছ বরাবর সাদা হয়ে গেছে। কি কিম্ভুতকিমাকার দেখাতো তখন।
ডেলা নীল, রবিন ব্লু গুঁড়ো, টিনোপল, উজালা ইত্যাদি সবেতেই এইসব সমস্যা হতো। তাই ইদানিং জামায় নীল দেওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
যেদিন ওয়াশিং মেশিন কেন হলো, দেখলাম তার ভিতরে ছোট্ট একটা খুপরি করা। সেখানে লেখা softner dispencer, মানে নীল দেওয়ার জায়গা। সেখানে নীল দিয়ে রাখলে, কাচার শেষে মেশিন নিজেই পরিমিত পরিমাণ নীল নিয়ে নেবে।
ভাবলাম, যাক, এবার এতদিনের অপদার্থতার ইতি হবে।
যেখানে যত সাদা জামা, প্যান্ট, মোজা, গেঞ্জি ছিল সব জুটিয়ে এনে মেশিনে দিয়ে, খুপরিতে বেশ করে নীলের গুঁড়ো ঢেলে নিশ্চিন্তে খবরের কাগজ নিয়ে বসলাম।
মেশিন clockwise-anti clockwise শুরু করতেই ভাবলাম, দেখি তো একবার।
সর্বনাশ, এ তো শুরু থেকেই নীল গুলে নিয়েছে। আর সেই নীলের প্রভাবে সাবানের ফেনা অবধি গায়েব হয়ে গেছে। মেশিনের মধ্যে নীল ঘূর্ণি পাক খেয়ে চলেছে।
পরের কথা আর শুনে কাজ নেই। মোটকথা সেই সব জামা গেঞ্জি সাবান সহযোগে উপর্যুপরি আরো দুবার কাচার পর সেগুলো ব্যবহারযোগ্য হয়েছিল।
তাই এখন কাপড়চোপড়ে নীল দেওয়া ছেড়ে দিয়েছি। যে দুএকটা সাদা জামা, গেঞ্জি আছে, তা নীল ছাড়াই ব্যবহার করি। একটু মলিন, লালচে দেখায়। তা দেখাক, কিন্তু কত ঝামেলা এড়ানো গেছে তা ভাবলেই রোমাঞ্চিত হই
সে যাক। কাজের কথা বলি।
কিন্তু আর বলবোই বা কি, ভূমিকা এত বড় হয়ে গেলে আরও কিছু বলতে সংকোচ হয়।
এটা একটা সাদা প্যান্সি (pansy) ফুল। আমরা বলি প্যাঞ্জি।
ভালো করে দেখলে বোঝা যায় কত ধুলো পড়েছে এর পাপড়িতে। একটু নীলের জলে দিয়ে নিলে হয়তো ময়লাটুকু বোঝা যেত না।
ফুলের নাম- প্যান্সি/Pansy
বৈজ্ঞানিক নাম - Viola tricolor hortensis
প্যান্সি ফুল Violaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। প্যান্সি শীতের সবচাইতে সুন্দর ফুল। রসালো ভারী পাতার কিনারায় নকশা করা। সবুজ পাতার ওপর রংবেরঙের ফুল প্রজাপতির মতো দেখায়। ফুলের ওপরের দিকে থাকে দুটি পাপড়ি আর নিচের দিকে তিনটি। নিচের পাপড়ি তিনটির আবার দুটির গড়ন এক রকম। বাকিটির রঙের মিশ্রণ ভিন্ন রকম।
সুন্দর প্যান্সি দেখা যাবে কার্জন হলের বাগানে। ফুলগুলি বিভিন্ন রং এর পাওয়া যায়। টবে, বাগানের বেড করে লাগানো করা যায়। এর প্রচুর হাইব্রিড প্রজাতি রয়েছে। প্যান্সি এতুটাই জনপ্রিয় ফুল যে বাগানবিলাসীদের কাছে এটি ৪০০ এরও বেশী নামে পরিচিত। অন্যান্য নামের মধ্যে Viola, Pansy, Pansy Violet, heartsease, love in idleness, flower of Jove, Johnny Jump Up নাম গুলো উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসূত্র- দৈনিক কালের কন্ঠ ও উইকিপিডিয়া
ছবি- নেট
Comments
Post a Comment