Foyer শব্দটির উচ্চারণ হয় ফয়েই।
কোনো অফিস বা হোটেলে ঢুকলে সামনেই যেখানে রিশেপসনিস্ট বসেন, সেই খোলা জায়গাটির নাম ফয়েই।
আমাদের অফিসের ফয়েই-এ রাখা সোনার মতো ঝকঝকে পুষ্পপাত্রে এগুলি ইস্টার লিলির ফুল।
ইস্টার লিলির যেমন রূপ, তেমনি সুগন্ধ। অতবড় ৬০০/৭০০ বর্গফুট জায়গা সৌরভ সুগন্ধে মাতিয়ে রাখে সারাক্ষণ। সে সুবাসের পরিমিতি এমনিই, কখনোই তা একঘেয়ে লাগে না। মিষ্টতা তার এমনিই সূক্ষ, কখনোই চড়া লাগে না। আর রূপ, সে তো শুধু দেখেই যেতে হয়। ওর পরতে পরতে রহস্য, তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে অজানার উদ্ভাস।
ফুলের কুঁড়ি লম্বাটে, রঙে সবুজ। যত ফোটার সময় এগিয়ে আসে, কুঁড়ির রঙ ফিকে হতে হতে একসময় সাদা হয়ে যায়।
পাপড়ি মেলার সময় হলে দলশীর্ষ ভেদ করে প্রথমেই বেরিয়ে আসে অতি মিহি স্বচ্ছ আস্তরে মোড়া গর্ভমুন্ডটি। তার আগায় তিনটি সূক্ষ আধার। সেখানেই এসে পড়ে পরাগরেণু।
পাপড়িগুলি একটু উন্মোচিত হলেই দেখা যায় ভিতরে ছটি পুংদন্ড। প্রতিটির মাথায় আলতো করে বসানো একটি করে দুই প্রকোষ্ঠের ক্যাপসুলের মতো পরাগধানী (anther). এদের ভিতরে থাকে চারটি থলির মতো অঙ্গ (microsporangia) যেখানে পরাগ সৃষ্টি হয়।
একটু পরেই পরাগধানীগুলি স্ফীত ওঠে এবং তাদের সারা গা ভরে যায় পরাগরেণুতে। সামান্য হওয়াতেই তারা দুলতে থাকে, ঝুম ঝুম করে নাচতে থাকে। তারপর একসময় ফেটে গিয়ে ঝরে পড়তে থাকে বাদামী রঙের লক্ষ নিযুত রেনুকণা।
ফুলের স্ত্রী স্তবক যা এতক্ষন নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, এবার তার স্বচ্ছ আস্তর খসে পড়ে, সে একটু একটু করে আর্দ্র হয়ে ওঠে ও একসময় স্বচ্ছ আঠালো রসে টুসটুস করতে থাকে। তারপর ক্রমশঃ বাঁক নিয়ে সবচেয়ে সুগঠিত, স্বাস্থ্যবান পরাগধানীটির কাছে সরে আসে। পতঙ্গ থাক বা না থাক, তাইতেই পরাগমিলন সম্পন্ন হয়।
পাপড়ির উন্মোচন থেকে পরাগমিলন সম্পন্ন হওয়ায় সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা।
আমি এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি বহুবার দেখেছি, বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি তুলেছি। আমাকে বসে থাকতে দেখে কেউ কৌতূহলী হলে, তাঁকে ডেকে কাছে বসিয়েছি, ব্যাখ্যা করে সাধ্যমতো বুঝিয়ে দিয়েছি। কেউ বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন, কেউ ভেবেছেন বদ্ধ পাগল, খেয়েদেয়ে কাজ নেই, পরাগমিলন দেখছে। এটা আবার কোনো দেখার জিনিস হলো!
Comments
Post a Comment