এই ফুলটির নাম সাদা মুসান্ডা বা ফিলিপ্পিকা ডোনা অরোরা।
এর কথা বলি।
মুসান্ডা (Mussaenda) এমন একটি ফুলের গাছ যা তার ফুলের জন্য নয়, বাগানে লাগানো হয় তার মঞ্জরীপত্রের (bracts) সৌন্দর্যের জন্য।
শাখার আগায় পুষ্পমুকুল আসার আগেই মঞ্জরীপত্রগুলি পরিণত হয়ে যায়।
এদের অনেক কাজ; পুষ্পমঞ্জরীকে রক্ষা করা তো আছেই, আছে তার সুন্দর রঙ দিয়ে পতঙ্গকে আকৃষ্ট করা, বিষ নিঃসরণ করে চরে বেড়ানো প্রাণীর হাত থেকে গাছ ও ফুলকে রক্ষা করা।
ফিলিপিন্সে জন্মভূমি রুবিয়াসিয়া পরিবারের সদস্য এই সাদা মুসান্ডার আর একটি নাম ফিলিপ্পিকা ডোনা অরোরা (Mussaenda philippica Aurorae) (ফিলিপিন্সের এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি Manuel L. Quezon (1878 – 1944)-এর পত্নীর নাম ছিল ডোনা অরোরা। তাঁরই নামে ফুলটির নাম)।
এর আরো সুন্দর সুন্দর নাম আছে; ব্যাঙ্কক রোজ, Buddha’s Lamp, Tropical Dogwood ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে মজার নামটি হলো ভার্জিন ট্রি (Virgin Tree).
ভার্জিন ট্রি নাম কেন হলো সেই গল্প বলি।
বেথেলহেমের আস্তাবলে যীশু জন্মগ্রহণ করবেন সেই খবর পেয়ে ম্যাজাইরা এসে তাঁকে আশীর্বাদ করে চলে চলে যাবার পরেই এক দেবদূতের আবির্ভাব হলো। তিনি জোসেফকে বলে গেলেন অবিলম্বে কুমারী মেরি ও শিশুপুত্র যীশুকে তাঁর বেথেলহেম ছেড়ে মিশর দেশে চলে যাওয়া উচিত। নাহলে রাজা হেরড তাঁদের হত্যা করবে।
ওঁরা রওনা হয়ে গেলেন। কায়রোর কাছে পৌঁছে খুব ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে মেরি একটি গাছের নিচে বসে পড়লেন। শরীর এলিয়ে দিলেন গাছের গায়ে। এদিকে দারুণ গরমে তখন কচি যীশুর প্রাণ বেরিয়ে যাবার অবস্থা। একটু জল না হলেই নয়। তখনই গাছটির গোড়ায় একটি শীতল স্বচ্ছ জলের প্রস্রবণ সৃষ্টি হলো। মা মেরি শিশু সন্তানকে সেই বারিধারায় স্নান করিয়ে শীতল করলেন, নিজে আকন্ঠ পান করলেন সেই জল। রক্ষা পেল তাঁদের জীবন।
তারপর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ সেই গাছটির পূজা করতে শুরু করলো। ইউরোপ থেকে যিনিই আসতেন, ওই গাছের একটুকরা ছাল নিয়ে যেতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল তা তাঁদের সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবে। সেই থেকে গাছটির নাম হয়ে যায় ট্রি অফ দি ভার্জিন।
ম্যাপল গাছের পাতার মতো পাঁচটি খাঁজ বিশিষ্ট পাতাকে বলা হয় সাইকামোর (Sycamore). ট্রি অফ দি ভার্জিন-এর পাতা ছিল তেমনই। তাই কানাডায় ম্যাপল গাছের আরেক নাম ট্রি অফ দি ভার্জিন।
ফিলিপিন্সের মানুষের বিশ্বাস মুসান্ডাই হলো সেই ট্রি অফ দি ভার্জিন বা ভার্জিন ট্রি।
সত্যসত্যই দেখা গেছে রোগ নিরাময়ে এই সাদা মুসান্ডার জুড়ি নেই। বুকের শ্লেষ্মা, পেটের ব্যাথা, অজানা জ্বর ইত্যাদিতে নাকি অব্যর্থ কাজ দেয়।
ফুলটির নাম Buddha’s Lamp কেন হলো তা নিয়েও আছে গল্প। সে আরেকদিন বলবো।
মোটকথা কষ্টের কাছে মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি, হিন্দু সবাই সমান। কোনো ভেদ নেই সেখানে।
সে যাক। একটু ফুলের কথা বলি।
মুসান্ডার ছোট্ট হলুদ ফুলে বৃতি পাঁচটি, পাপড়িও পাঁচটি আবার মঞ্জরী পত্রও পাঁচটি। সাইকামোর!
Comments
Post a Comment