তখন সদ্য দুর্গা পূজা মিটেছে। সেদিন রোব্বার, সাত সকালে বিদ্যুৎদা এসে হাজির। বললেন, তোর স্কুটারটা বার কর তো, কলকাতায় যাবো।বিদ্যুৎদার খুব ফুল গাছের শখ। ঘুরে ঘুরে ফুলের গাছ কিনে বেড়ায়। গ্যালিফ স্ট্রিটের অনেকেই বিদ্যুৎদাকে চেনে। তেমনি একটি ছেলেকে বললেন, স্টক কই, স্টক আনিসনি?
ছেলেটি কাঁচুমাচু হয়ে বলল, স্টক আপনার হাওড়ায় বাঁচবে না, স্টক আপনাকে দেবো না।
বিদ্যুৎদা অদ্ভুত একটা মুখভঙ্গি করে বললেন, সক্কালবেলাতেই বাংলা খেয়ে এসেছিস? হাওড়ায় বাঁচে না মানে? কি বলছিস তুই?
জানা গেল গতবার অনেক রঙের স্টক নিয়ে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎদা, কিন্তু একটি গাছেও সেবার ফুল আসেনি। বিদ্যুৎদা গিয়ে ছেলেটিকে মারতে বাকি রেখেছিলেন, শালা শুয়ার, জালি মাল বেচেছ আমায়! এত যত্ন করলাম, একটাতেও ফুল এলো না?
জেদ চেপেছে, এবারও স্টক কিনবেন।
ছেলেটি নিজের গাছে আস্থা রাখতে পারলো না, দূরে আরেকজনের কাছ থেকে ক'টি চারা এনে দিয়ে বললো, এখন কিছু দিতে হবে না, ফুল হলে দাম দেবেন।
বিদ্যুৎদা বললেন, আর না হলে? আমার পরিশ্রমের দাম নেই?
আমি শান্ত করলাম।
গাছ নিয়ে ফেরার পথে জিজ্ঞাসা করলাম, স্টক কিরকম ফুল গো? স্টক বানান কি?
বিদ্যুৎদা বললেন, বলতো কি বানান?
বললাম, Stalk?
বললেন, না হলো না। এর বানান stock. বিদ্যুৎদা আমাকে তিনটি চারা দিয়েছিলেন। তিনটি গাছেই ভেঙে ফুল হল। শীত পেরিয়ে এপ্রিলের গরমেও তার ফোটার শেষ নেই। গাছ লম্বা হয়ে হেলে পড়েছে, শাখা প্রশাখাগুলি ছত্রভঙ্গ। তবু ফুলের বিরাম নেই।
একদিন কথায় কথায় বিদ্যুৎদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার স্টক কেমন ফুটলো এবার?
বিদ্যুৎদা ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখে বললেন, দেখ, তোর চেয়ে আমি অনেক বড়, আমার সঙ্গে ফাজলামিটা অন্তত মারিস না।
বুঝলাম, বিদ্যুৎদা এবারও ফুল ফোটাতে পারেনি।
কিন্তু তাই বলে হাওড়ায় হয়না, এটা ঠিক কথা নয়।
বিদ্যুৎদাকে নিয়ে বাড়িতে এলাম।
ও আমার ফুলন্ত গাছগুলোর সামনে বসে পড়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেললো, কেন রে সোনা, আমি কি অপরাধ করেছি?
পরের বার আমি গিয়ে বিদ্যুৎদার বাগানে স্টক বসিয়ে দিয়ে এসেছিলাম, সাদা, লাল, বেগুনি।
একদিন দেখা হতে বলেছিল, তুই আমার গুরু, বুঝলি!
Comments
Post a Comment