Skip to main content

উলট চন্ডাল/অগ্নিশিখা




উলট চন্ডাল/অগ্নিশিখা (বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্নিশিখা নামটির প্রবর্তক)
বৈজ্ঞানিক নাম: Gloriosa superba পরিবারঃ Liliaceae (Lily family)
পরিচিতি:
লতানো উদ্ভিদ। পাতা সরল, সমান্তরাল শিরা বিন্যাসযুক্ত। ফুল একক। পাপড়ি ছয়টি। গর্ভকেশর তিনটি। পাপড়ি প্রথমে হালকা সবুজ। পরে পীত ও রক্তবর্ণ। ফুটন্ত ফুলের পাপড়ি ঊর্ধ্বমুখি। ফলে অনেক বীজ। জুলাই আগস্ট মাসে ফুল ফোটে। ১-৩টি লম্বা আকারের বীজ থাকে। নভেম্বর মাসে ফুল ও মার্চ মাসে ফল হয়।
গুনাগুন:
কন্দ ও পাতাঔষধি গুণসম্পন্ন। কটু, তিক্ত, উষ্ণবীর্য, কফ-বাত, কৃমি, শোথ ও ব্রণনাশক, বিরেচক, বমনকারক ও বলকারক।
রাসায়নিক উপাদান:
কন্দ, ফুল ও বীজে কলচিসিন ও গ্লোরিওসিন অ্যালকালয়েড, ফিনোলিক, লুটিওলিন ও বিটা সাইটোস্টেলল রয়েছে।


উলটচন্ডাল
বাংলা নাম : উলটচন্ডাল, অগ্নিশিখা, লাঙ্গলী, গুরটচন্ডাল, ছিন্নমুখী, গর্ভপাতিনী।
ইংরেজি নাম : Flame Lily, Climbing Lily, Creeping lily, Glory Lily, Fire Lily, Tiger claw, Malabar Glory Lily, Superb Lily.
বৈজ্ঞানিক নাম : Gloriosa superba
উলটচন্ডাল আমাদের দেশের খুব সুন্দর একটি লতানো বনফুলের গাছ। তবে লতাটি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বন থেকে। আফ্রিকার উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলে বন জঙ্গলে উলটচন্ডালের উৎপত্তি। তবে ভারতের আসাম, হিমালয় থেকে উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় বিশেষ করে মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় প্রাকৃতিকভাবে উলটচন্ডাল জন্মে। ভেষজ ব্যবহারের জন্য মাত্রাতিরিক্ত আহরণের কারণে লতাটি এখন বনের পরিবেশে কম দেখা যায়। এই ফুলের কদর বিশ্বব্যাপী। এটি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজ্য ফুল এবং জিম্বাবোয়ের জাতীয় ফুল।
এটি বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জন্মায় যেখানে সূর্যালোক সহজে পৌছায়। অনুর্বর মাটিতেও এটি বেঁচে থাকতে পারে। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২৫৩০ মিটার উপরেও এর চাষ হয়। শীত প্রধান দেশে গ্রীণ হাউসে অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট হিসাবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।
এই ফুলের গাছ ৬ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ডের গোড়া খিলানের মত। পাতা দেখেই গাছটি চেনা যায়। লম্বাটে পাতার আগাটা সরু সুতোর মতো, তা দিয়ে আশ্রয় আকড়ে ধরে ধরে উপরে ওঠে। ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা পাতাগুলি বৃন্তহীন, সরল, সমান্তরাল শিরা বিন্যাসযুক্ত।
সাধারণত বর্ষায় ফুল ধরে, লতাজুড়ে। লাল-হলদে রঙে মিশ্রিত ফুল। ফুলের আগার রং লাল এবং গোড়ার অংশ হলুদ বর্ণের। ফুলের পাঁপড়ি গুলি দেখতে লাগে আগুনের শিখার মত। তাই এ ফুলের আরেক নাম অগ্নিশিখা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্নিশিখা নামটির প্রবর্তক। ফুল একক, ৩-৫ ইঞ্চি লম্বা। মঞ্জরিতে এক বা একাধিক কুঞ্চিত দলযুক্ত গন্ধহীন ফুল ফোটে। ফুলে পাপড়ি ছয়টি। পুংকেশর ৬টি এবং তা বাইরের দিকে ছড়ানো। গর্ভকেশর তিনটি। পাপড়ি প্রথমে হালকা সবুজ। পরে হলুদ ও রক্তবর্ণ। ফুটন্ত ফুলের পাপড়ি ঊর্ধ্বমুখি। ফোটে বর্ষা থেকে শরৎ পর্যন্ত। ফল ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা। ফলে অনেক বীজ।
শিকড় একগুচ্ছ মিষ্টিআলুর মতো। শরতে শুকোতে শুরু করে শীতে গাছ পুরো মরে যায়। গ্রীষ্মকালে পুনরায় মূল থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়।
এই গাছের সমন্ত অংশ বিষাক্ত। তবে নানান ভেষজ গুণে গুণান্বিত এ লতা। কন্দ, ফুল ও বীজে কলচিসিন ও গ্লোরিওসিন অ্যালকালয়েড, ফিনোলিক, লুটিওলিন ও বিটা সাইটোস্টেরল রয়েছে। এ লতার মূল কটু, তিক্ত, উষ্ণবীর্য এবং বিরেচক। এই গাছের বিভিন্ন অংশ কুষ্ঠ, অর্শ, পেটের অসুখ, ফোড়া, কৃমি নাশ, যৌন ব্যধি, পোকার কামড়ের উপশমে, শোথ ও ব্রণনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস মাথার উকুন ধ্বংসে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও এটি বমনকারক ও বলকারক।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom Plantae
Subkingdom Viridiplantae
Infrakingdom Streptophyta
Superdivision Embryophyta
Division Tracheophyta
Subdivision Spermatophytina
Class Magnoliopsida
Superorder Lilianae
Order Liliales
Family Colchicaceae
Genus Gloriosa
Species Gloriosa superba

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।