Skip to main content

দাঁতরাঙা বা বনতেজপাতা



দাঁতরাঙা বা বনতেজপাতা
বৈজ্ঞানিক নাম: Melastoma malabathricum
পরিচিতি:
এই গাছটির উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকলেও কখনো কখনো ৩ মিটার উচ্চতার গাছও চোখে পড়ে। তেজপাতার ন্যায় দেখতে এর পাতার দৈর্ঘ্য ৪ হতে ১১ সেন্টিমিটার; প্রস্থে ১.৩ সেন্টিমিটার যাতে ৫ হতে ৭ টি শিরা থাকে। এদের ফুল উজ্জ্বল বেগুনি বর্ণের এবং ফল সবুজ।
ব্যবহার:
এটি কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগে ব্যবহৃত হয়। দাঁতরাঙার পাতার নির্যাস মানবদেহের ক্যান্সার, হৃদরোগ রোধে সহায়ক। তাছাড়া এর পাতার রস আমাশয়, পেটব্যথা, বাত ও বাতজ্বর দূর করতে পারে। আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁত ব্যথা, চর্মরোগ ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় দাঁতরাঙা ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।



|| দাঁতরাঙা ||
বাংলা নাম : দাঁতরাঙা, ফুটকি, লুটকি, ফুটুল, বন তেজপাতা।
ইংরেজি নাম : Indian Rhododendron, Malabar Melastome,Senduduk
বৈজ্ঞানিক নাম : Melastoma malabathricum

যার এতরূপ-রঙ, সে কি না পড়ে থাকে একেবারেই মানুষের চোখের আড়ালে, নিতান্ত অনাদরে। জংলাগাছ, তাই নগরে গাছটি দুর্লভ। অপ্রয়োজনীয় গাছ হিসেবেই বেশি পরিচিত। দাঁতরাঙা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটি একসময় সারাদেশেই দেখা যেত। কিন্তু এখন বাংলার বুনো মাঠে এর দেখা মেলে কালেভদ্রে। সাধারণত উঁচু জমি দাঁতরাঙার বিশেষ পছন্দ। পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড়ের ধারে প্রচুর দেখা যায়। লোকবিশ্বাস রয়েছে, যে মাটিতে দাঁতরাঙা ফোটে সে মাটিতে চা গাছ ভালো হয়। সে কারণে একে ‘টি ইন্ডিকেটর’ বা চা নির্দেশক শ্রেণির উদ্ভিদ হিসেবে একে ধরে নেওয়া হয়।ভারত ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দেখা যায়। এসেছে অস্ট্রেলিয়া বা ওশেনিয়া থেকে; অনেকের মতে, এটি এশিয়ারই গাছ।
দাঁতরাঙা অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু গাছ। সাধারণত দাঁতরাঙা গাছ ১ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। কাণ্ড নরম, খসখসে। কাণ্ডের রং লালচে সবুজ। পূর্ণাঙ্গ গাছ মূল কাণ্ড ১ থেকে ২ ইঞ্চি মোটা হয়। পত্র সরল, বেশ পুরু, অবডিম্বাকার, চামড়ার মতো, হালকা পশমযুক্ত। বর্শফলাকৃতির পাতা ৪-১১ সেন্টিমিটার লম্বা, ১.৩ সেন্টিমিটার চওড়া এবং পাঁচ-সাতটি শিরাবিশিষ্ট হয়ে থাকে। কিণারগুলোও করাতের মতো ধারালো। পাতার রং সবুজ। তবে পাতার গায়ে অসংখ্য লাল ও বাদামি ফুটকি আছে। এর পাতা দেখতে অনেকটা তেজপাতার মতো। তাই এর আরেক নাম বন তেজপাতা।
দাঁতরাঙা গাছ প্রায় সারা বছর উজ্জ্বল বেগুনি রঙের ফুলে ভরে থাকলেও প্রধানত গ্রীষ্ম-বর্ষায় গাছে প্রচুর ফুল ফোটে। ফুল গোলাকার, ব্যাস প্রায় ৫-৬ সেন্টিমিটার।ফুলের সুন্দর পাঁচটি লালচে বেগুনি পাপড়ি থাকে। পাপড়ি পাতলা, হৃৎপিণ্ডাকৃতির। ফুলের ঠিক কেন্দ্রে ৫টি হলুদ এবং ৫টি বেগুনি কেশর থাকে। এই পুংকেশর ফুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। কিন্তু এমন সুন্দর ফুলটির স্থায়িত্ব মাত্র একদিন।তবে অনেকসময় ভিন্ন প্রজাতির সাদা বা গোলাপী রঙের ফুলেরও দেখা মেলে।
ফুল ফোটার পর এতে এক মিলিমিটারের চেয়েও ছোট ছোট অনেক ফল হয়। ফল সবুজ। পাকা ফলগুলোর ভেতর থাকে বেগুনি রঙের মিষ্টি শাঁস ও অসংখ্য কালো কমলা বীজ। সুমিষ্ট এই ফল খাওয়ার পরই দাঁত ও জিহ্বা বেগুনি রঙে রঙিন হয়ে যায়। তাই এর নাম হয়েছে দাঁতরাঙা। পরিণত ফল আপনা থেকেই ফেটে গিয়ে ভেতর থেকে বীজ বাইরে বেরিয়ে আসে।
দাঁতরাঙার বেশ ওষুধিগুণ রয়েছে। বহুকাল যাবৎ ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগে ব্যবহৃত হয়। দাঁতরাঙার পাতার নির্যাস মানবদেহের ক্যান্সার, হৃদরোগ রোধে সহায়ক। তাছাড়া এর পাতার রস আমাশয়, পেটব্যথা, বাত ও বাতজ্বর দূর করতে পারে। আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁত ব্যথা, চর্মরোগ ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় দাঁতরাঙা ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এন্টিভমিটিং এবং জোঁক এর কামড় থেকে রক্ত বন্ধ করতেও এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom Plantae
Subkingdom Viridiplantae
Infrakingdom Streptophyta
Superdivision Embryophyta
Division Tracheophyta
Subdivision Spermatophytina
Class Magnoliopsida
Superorder Rosanae
Order Myrtales
Family Melastomataceae
Genus Melastoma
Species Melastoma malabathricum

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।