Skip to main content

কাঁঠালি চাঁপা বা কাঁঠালি চম্পা


কাঁঠালি চাঁপা বা কাঁঠালি চম্পা
বৈজ্ঞানিক নাম: Artabotrys hexapetalus
পরিচিতি:
গাছটি মাঝারি আকারের লতানো গুল্ম, ৮-১০ ফুট লম্বা। তবে এর কাষ্ঠল লতা দীর্ঘ হয়ে থাকে। শাখা অবনত অর্থাৎ ঝুকেঁ থকে। কাঠালি চাঁপার উজ্জ্বল সবুজ পাতা ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, পাতা "একান্তর" এবং চর্মবৎ। পত্রফলকের নিম্নতল ফ্যাকাশে সবুজ। ফুল ফোটে বর্ষায়। শুরুতে সবুজাভ ফুলটি ধীরে ধীরে কড়া হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফুলের গন্ধ তীব্র, মাতাল করা। পাতার কক্ষে একক বা ২-৩টি ফুল জন্মে। এই ফুলের নির্যাস সুগন্ধি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়

|| কাঁঠালি চাঁপা ||
অন্যান্য নাম : কাঁঠালি চাঁপা, মনোরঞ্জিনী, হরি চম্পা, চিনি চম্পা, কাঠ চাঁপা, গুই চাঁপা
ইংরেজি নাম : Bhandari Vine (India), Tail Grape, Ylang Ylang Vine, Climbing Lang-Lang, Ilang Ilang,
বৈজ্ঞানিক নাম : Artabotrys hexapetalus
“যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়;
যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে,
যখন চড়াই পাখি কাঁঠালিচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট আছে গুজে,
যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়,”
বর্ষায় প্রকৃতি সেজে ওঠে মোহময়ী রূপে। গ্রীষ্মের খরতাপ কাটিয়ে প্রকৃতিতে তখন বিরাজ করে বৃষ্টির স্নিগ্ধ আবেশ। বাইরে দৃষ্টিটা ফেরালেই দেখা যায়, সবুজ প্রকৃতি চুপচাপ ভিজে চলেছে। যেন একান্ত ভাবে উপভোগ করছে বর্ষা। বর্ষার ঘোরলাগা নান্দনিক রূপ আমাদের মনকে মাতিয়ে রাখে। ভাবনাগুলোকে এলোমেলো করে দেয়। স্বপ্ন আঁকে মনের খাতায়। সবুজের সাজে সেজে ওঠা প্রকৃতির প্রতিটি পরতে পরতে ফুটে থাকে বর্ষার নানান ফুল। এমনই এক বর্ষার ফুল হল কাঁঠালি চাঁপা।
কাঁঠালি চাঁপার হলুদ রঙের ফুল থেকে পাঁকা কাঁঠালের তীব্র সুবাস গন্ধ ছড়ায় বলেই একে কাঁঠালি চাঁপা বলা হয়। ভারতবর্ষে এটি মনোরঞ্জিনী বা কোনো কোনো এলাকায় একে হরি চম্পা নামেও পরিচিত। এর আদিনিবাস দক্ষিণ চীন, মায়ানমার, ফিলিপাইন ও ভারতবর্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Artabotrys hexapetalus। Artabotrys শব্দটি এসেছে গ্রীক artao (support) এবং botrys (bunch of grapes) থেকে। আর hexapetalus-এর অর্থ Six petals বা ছয়টি পাপড়িযুক্ত। কাঁঠালি চাঁপার ফুল ছয়টি পাঁপড়িযুক্ত এবং এর আঙুরের মত গুচ্ছবদ্ধ ফলগুলি বাঁকা আঁকশির মত বোঁটা থেকে ঝুলতে থাকে তাই এমন নাম।
কাঁঠালি চাঁপা গাছটি মাঝারি আকারের, চিরসবুজ কাষ্ঠল-লতানো গুল্ম। প্রথমে ঝোপ জাতীয় গাছ হিসেবে বেড়ে উঠতে শুরু করলেও পরের দিকে লতিয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। তখন এর পাতাগুলি আঁকশিতে রুপান্তরিত শাখাগুলিকে কোন কিছুর সংলগ্ন হয়ে বেয়ে উঠতে সাহায্য করে। গাছটি সাধারণত ৬-৮ মি. লম্বা হয়। এর কাষ্ঠল লতা বেশ দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং শাখাগুলি অবনত ধরনের। ছোট ছোট ডাল কাঁটায় রুপান্তরিত।
কাঠালি চাঁপার পাতা উজ্জ্বল সবুজ রঙের। পত্রফলকের নিম্নতল ফ্যাকাশে সবুজ। পাতাগুলি ১০-১৫ সেমি লম্বা ও ৩-৫ সেমি চওড়া এবং একান্তর ভাবে সজ্জিত থাকে। কাঠালি চাঁপার উজ্জ্বল সবুজ পাতা খুব ঘন-সন্নিবিষ্ট ভাবে সাজানো থাকে বলে সুন্দর ছায়া দেয় এবং কিছু কিছু পাখি, বিশেষ করে টুনটুনি পাখীরা এই গাছ খুব পছন্দ করে - কারণ পাতাগুলি বুনে চমত্কার বাসা তৈরি করা যায়।
কাঠালি চাঁপার ফুল ফোটে সাধারণত বর্ষায়। তবে গ্রীষ্মেও ফুটে থাকে। ফুলে পাঁপড়ির সংখ্যা ৬টি, মুক্ত ধরনের এবং ৩টি করে দুটি স্তরে সাজানো থাকে। পাঁপড়িগুলি বেশ মোটা, মাংসল, ২.৫ - ৪ সেমি লম্বা এবং ১.২ সেমি চওড়া। গোড়া এবং কিনারায় অল্প রোমশ। ভেতরে লুকোন থাকে অনেক ছোট ছোট পুংকেশর। পাতার কক্ষে একক ভাবে বা একসাথে ২-৩টি ফুল জন্মে। ফুলের বোঁটা বাঁকা, আঁকশির মত গড়নযুক্ত। ফুলের গন্ধ তীব্র, সুমিষ্ট ও মাতাল করা। পাতার আড়ালে আড়ালে ফোটা ফুল প্রথমে থাকে সবুজ পরে ক্রমেই হলদে রঙের হতে থাকে। আর ফুল যখন হলদে হতে থাকে, তখনই মাতাল করা সুগন্ধ বের হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় ফুলটি গন্ধ ছড়ায়। কাঁঠালি চাঁপা ফুলের গন্ধের তীব্রতা এমনই যে সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও গাছের পাশ দিয়ে হাঁটলেই বোঝা যায় তার অস্তিত্ব। এর ভারি গন্ধ বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। গাছ থেকে তোলা ফুলের গন্ধও বহুদিন ধরে থাকে।
কাঠালি চাঁপার ফল গুচ্ছবদ্ধ জন্মায়। প্রতি গুচ্ছে থাকে ৬-১০টি ফল। ফলগুলি গোলাকার, ৩-৪ সেমি লম্বা ও ২ সেমি চওড়া। ফলের বৃন্ত বাঁকানো আঁকশির মত। উজ্জ্বল সবুজ চকচকে ফলগুলি কচি অবস্থায় সবুজ থাকে, পেকে গেলে হলুদ বা কমলা হলুদ রঙ ধারন করে। ফুলের মত ফলও তীব্র গন্ধযুক্ত হয়। প্রতি ফলে ১-২টি বীজ থাকে। বীজগুলির একদিক উত্তল ও অপর দিক সমান, গাঢ় বাদামী রঙের এবং ২ সেমি লম্বা ও ১.২ সেমি চওড়া।
কাঠালি চাঁপা সামান্য হলেও ভেষজগুন সম্পন্ন। এর ফুল থেকে বলকারক টনিক তৈরী হয়। ফল এবং গাছের ছাল জ্বর, ডায়েরিয়া, আলসার, প্রদাহ, শ্বাস যন্ত্রের সমস্যা, চর্মরোগ ও ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। পাতা জীবানু ও ছত্রাকনাশক গুনসম্পন্ন। এর ফুলের নির্যাস সুগন্ধি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
|| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ||
Kingdom : Plantae
Subkingdom : Viridiplantae
Infrakingdom : Streptophyta
Superdivision : Embryophyta
Division : Tracheophyta
Subdivision : Spermatophytina
Class : Magnoliopsida
Superorder : Magnolianae
Order : Magnoliales
Family : Annonaceae
Genus : Artabotrys
Species : Artabotrys hexapetalus

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

Jhumko Lata, ঝুমকো লতা, Passion flower (Passiflora caerulea)

Jhumko Lata , ঝুমকো লতা, Passion flower ( Passiflora caerulea ) জংলি ঝুমকো ইংরেজি নাম: Wild Passion Flower বৈজ্ঞানিক নাম: Passiflora foetida পরিচিতি: এটি আরোহী লতা। আকর্ষীর মাধ্যমে কোনো ধারককে আঁকড়ে ধরে বেয়ে ওঠে। ফুল সুগন্ধি নয়, তবে দেখতে আকর্ষণীয়। পাতা একান্তর, দুটি খাঁজ রয়েছে। ফুল বেগুনি ও সাদা রঙের। বৃতি পাঁচটি, দল পাঁচটি এবং বৃতি নল থেকে কিছুটা খাটো। ফল পাকলে কমলা লাল বর্ণের হয়।এর পাকা ফল খাওয়া যায়। স্বাদে মিষ্টি ও রসাল। কিন্তু কাঁচা ফল বিষাক্ত ও ভক্ষণে মানা। বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, মাদাগাস্কার ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এ লতার বিস্তৃতি রয়েছে। বীজ দ্বারা বংশবৃদ্ধি ঘটে। প্যাশন ফ্লাওয়ার / ঝুমকোলতা বৈজ্ঞানিক নাম: Passiflora Incarnata পরিচিতি: এটি একটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ গাছেরপাতা দেখতে হাতের তালুর মতো। পাতায় তিনটি খাঁজ আছে এবং প্রতিটি অংশ দেখতে আঙ্গুল সদৃশ। পাতার অগ্রভাগ সুচালো। পাতার কক্ষ থেকে লতা বের হয়। ফুল একক, সুগন্ধযুক্ত। বাতাসে একটা মৌতাতানো সুবাসিত গন্ধ ছড়ায়। হালকা বেগুনি রঙের পাপড়ি বাইরের দিকে সজ্জিত থাকে। এ গাছের ...

অলকানন্দা

অলকানন্দা বৈজ্ঞানিক নাম: Allamanda cathartica পরিচিতি: কান্ড গোল, সরু সরু ডাল, চিরসবুজ, তেমন পত্রঘন নয়। পর্বসন্ধিতে ৪টি পাতা, লম্বাটে, ৭-১১*৩-৫ সেমি, পাতার নিচের মধ্যশিরা রোমশ। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় অনেকদিন ফুল ফোটে। বড় বড় হলুদ রঙের ফুল, গন্ধহীন, দলনলের ছড়ান, প্রায় ৬ সেমি চওড়া, মুখ গোলাকার, ৫ লতি। অলকানন্দা বাংলা নাম : অলকানন্দা, স্বর্ণঘন্টা, ঘন্টালতা ইংরেজি নাম : Golden Trumpet, Yellow Bell, Common Trumpetvine, Yellow Allamanda বৈজ্ঞানিক নাম : Allamanda cathartica অলকানন্দা (রবি ঠাকুরের দেয়া নাম) একটি গুল্মজাতীয় গাছ। ব্রাজিল ও মধ্য আমেরিকার প্রজাতি। কান্ড গোল, সরু ডাল, চিরসবুজ, পাতা তেমন ঘন নয়। পর্বসন্ধিতে ৪টি পাতা, লম্বাটে, ৭-১১.৩-৫ সেমি, পাতার নিচের মধ্যশিরা রোমশ, বিন্যাস আবর্ত। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় অনেকদিন ফুল ফোটে। ডালের আগায় বড় বড় হলুদ রঙের ফুলটি দেখতে খুবই সুন্দর, ফুল গন্ধহীন, দলনলের ছড়ান, প্রায় ৬ সেমি চওড়া, মুখ গোলাকার, ৫ লতি। রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে এটি সবচেয়ে ভালভাবে ফোটে। জল জমে থাকেনা এমন মাটিতে এটি ভাল জন্মে। এটি অনেকটা লতা জাতীয় গাছ, তাই বেড়া বা লাঠিতে ভর দিয়ে এটি বেড...