Skip to main content

কেয়া



কেয়া
বৈজ্ঞানিক নাম: Pandanus fascicularis
পরিচিতি:
কেয়া দৃঢ় গুল্মজাতীয় গাছ। কাণ্ড ঝোপাকার, প্রায় তিন-চার সেন্টিমিটার উঁচু, চকচকে সবুজ থেকে বাদামি, কাণ্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে শাখার সৃষ্টি। পত্র নিম্নমুখী, প্রান্ত ও মধ্যে শিরা বক্র কণ্টকযুক্ত। প্রায় প্রতিটি কাণ্ডেই অসংখ্য বায়বীয় মূল আছে, যা গাছকে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। এর ফলে প্রবল বাতাসেও গাছ উপড়ে যায় না।
মার্চ মাসে পাতার প্রান্ত থেকে ফুল আসে। ফুল ছোট, সাদা ও সুগন্ধী। ফুল স্পাডিক্স মঞ্জরিতে আবদ্ধ থাকে। ফল বৃহৎ, আনারসসদৃশ গোলাকার, পাঁচ থেকে আটটি একত্রে আঁটিবদ্ধ, খাঁজযুক্ত। পাকা ফল কমলাটে হলুদ।
পাতা চর্ম রোগে ব্যবহার করা হয়। বালুকাময় সমুদ্র উপকূল, খালের ভূখণ্ডের পার্শ্ববর্তী স্থানে জন্মে।

কেয়া
বাংলা নাম : কেয়া, কেতকী, কেওড়া, তীক্ষ্ণপুষ্পা, নৃপপিয়া, পাংশুলা,ইন্দুকলিকা, স্বর্ণপুষ্পী, কনকপ্রসবা, কন্ঠদলা, গন্ধপুষ্পা।
ইংরেজি নাম : Fragrant Screw Pine, Umbrella tree, Screw pine
বৈজ্ঞানিক নাম : Pandanus fascicularis
কেয়া দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার স্থানীয় গাছ। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, জাপান প্রভৃতি দেশে প্রচুর জন্মে। সমতলভূমি এলাকায় এদের দেখা গেলেও নোনা মাটিতে ভালো জন্মে। জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেও হিমালয়ের উঁচু স্থানে কেয়া ছিল। আমাদের প্রাচীন সাহিত্য, হিন্দু-পুরাণ, লোককাহিনীতে কেয়ার কথা আছে। কবি নজরুল কেয়াকে নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন –
"রিমি ঝিম রিমি ঝিম ঐ নামিল দেয়া।
শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া।"
কেয়া গুল্মজাতীয় সুগন্ধি উদ্ভিদ। কেয়া গাছ লম্বায় ১০-১২ ফুট হয়ে থাকে। এর কাণ্ড গোলাকার এবং কণ্টকময়। গাছের প্রধান কাণ্ড থেকে অনেক শাখা-প্রশাখা বের হয়। গাছগুলো প্রায় বক্র হয়। গাছের নিম্নদেশ থেকে মোটা শাখা পর্যন্ত বেশ কিছু মূল বের হয়ে মাটিতে ভিত্তি তৈরি করে। এগুলোকে ঠেসমূল বলা হয়। এই মুল গাছের কাণ্ডকে দৃঢ়ভাবে মাটির সাথে যুক্ত করে এবং গাছের ভারবহনে সহায়তা করে। এ গাছগুলো পরস্পরের সাথে জড়াজড়ি করে নিবিড় এবং দুর্গম পরিবেশ তৈরি করে।
এই গাছের পাতা কাণ্ড থেকে সরাসরি পত্রমূল ছাড়াই বের হয়। পাতার গোড়া কাণ্ডের সাথে জড়িয়ে থাকে। এর পাতা ৪ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা এবং ২-৩ ইঞ্চি চওড়া হয়। পাতার উভয় প্রান্তে করাতের মতো কাঁটা থাকে। পাতার অগ্রভাগ সরু। পাতাগুলোর অগ্রভাগ মাটির দিকে অবনত থাকে। অনেক সময় দেখে হয় যে, যেন পাতার মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে। পাতার রঙ সবুজ এবং উভয় তল মসৃণ।
কেয়া একলিঙ্গীক গাছ। পুরুষ কেয়াকে বলা হয় সিত কেতকী এবং স্ত্রী কেয়াকে স্বর্ণ কেতকী বা হেম কেতকী। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কেয়া ফুল ফোটে। এই কারণে বাংলাদেশে কেয়াকে বর্ষার ফুল বলা হয়। এর ফুলের রঙ সাদা এবং গন্ধ গভীর ও মাদকতাপূর্ণ। কেয়া ফুল দ্বিবাসী বা ভিন্নবাসী।মানে পুরুষ ফুল স্ত্রীফুল ভিন্ন গাছে ফুটে থাকে। পুরুষ ফুলের গন্ধ উগ্র।এই গাছের ফুল থেকে সুগন্ধী তেল তৈরি করা হয় যা কেওড়া তেল নামে অবিহিত এবং বাস্পীভবন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় কেওড়ার জল।
স্ত্রী ফুলের গাছেই দেখা যায় ফল।আশ্বিন কার্তিক মাসে গুচ্ছাকার ফল হয়। এই ফলের গাত্র বেশ শক্ত হয়। দূর থেকে এই গুচ্ছ ফলকে আনারসের মতো মনে হয়। এর রঙও আনারসের মতো লালচে হয়ে থাকে। কেয়া ফল ১৫-১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। ফল কমলা, পীত বা ধুসর হয়। অনেকে এই ফল খায়। কেতকী তিতা স্বাদের।
কেয়া পাতার রস বসন্ত, ব্রণ, কুষ্ঠ, ডায়াবেটিস রোগে উপকারী। ফুলের তেল পেট ব্যথা কমাতে সহাযতা করে। নানান রান্নায় কেওড়ার ফুলের জল ব্যবহূত হয়ে থাকে। এ ছাড়াও কেয়ার কাণ্ড, পুষ্পদণ্ড, দণ্ড, বীজ ও ঝুরি নানান ওষুধে কাজে লাগে। বিশেষত বিষাক্ত পোকার কামড় ও খুশকি কমাতে কেয়া বেশ উপকারী।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom Plantae
Subkingdom Viridiplantae
Infrakingdom Streptophyta
Superdivision Embryophyta
Division Tracheophyta
Subdivision Spermatophytina
Class Magnoliopsida
Superorder Lilianae
Order Pandanales
Family Pandanaceae
Genus Pandanus
Species Pandanus fascicularis

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।