Skip to main content

অনন্ত লতা




অনন্ত লতার
বৈজ্ঞানিক নাম: Antigonon leptopus।
পরিচিতি:
লতানো কাণ্ড কোনাচে ও খাঁজকাটা। লম্বায় ২০ থেকে ২৫ ফুট হয়। সবুজ পাতা হূৎপিণ্ডাকার। বিন্যাস একান্তর। পাতার প্রান্তে আকর্ষী থাকে, যা কাণ্ডকে হেলে পড়া থেকে রক্ষা করে। লতার বৃদ্ধি দ্রুত হয়। ফুল ফোটে গ্রীষ্মে। পাতার কক্ষে লতার আগায় ছোট ছোট গোলাপি ফুল। বৃত্যংশ চারটি, রঙিন। লাল ও সাদা রঙের ফুলও ফোটে, তবে সাদা ফুল আমাদের দেশে দুর্লভ।

অনন্তলতা
বাংলা নাম : অনন্তলতা, মধুলতা।
ইংরেজি নাম : Coral vine, Honolulu creeper, Mexican creeper, Kodi rose, Love vine, Sandwitch Island Climber, Corallita, Pink Vine, Bride's Tears, Chain-of-love, Hearts On A Chain, Queen's wreath, Queen's jewels
বৈজ্ঞানিক নাম : Antigonon leptopus
অনন্ত কাল ধরে স্বমহিমায় টিকে আছে অদ্যাবধি সে কারণে অনন্তলতা। সুন্দর ফুল দেখে যুগে যুগে আবেগী মানুষ লাভ চেইন, লাভ ভাইন, আরো কতো রোম্যান্টিক বিশেষণে ভূষিত করেছে তাকে। যদিও শোভাবর্ধক লতা হিসাবে এর খুব একটা জনপ্রিয়তা নেই। আমাদের রীতিবদ্ধ বাগানে খুব একটা চোখে পড়ে না। বরং আগাছা হিসাবেই এর পরিচিতি বেশি। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে আগাছা হিসেবে এরা চরম আকার ধারণ করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ফ্লোরিডাতে চিহ্নিত হয়েছে আগ্রাসী আগাছা (Exotic Pest Control Council, Florida) হিসেবে। আদিবাস মেক্সিকো থেকে সারা দুনিয়াতে এই গাছ ছড়িয়েছে কচুরি পানার মতো। প্রচন্ড মৃত্তিকা ও বায়ু দূষণের মধ্যেও বছর বছর ধরে বহাল তবিয়তে টিকে থাকে এরা। যে কোন গাছকে জড়িয়ে, পাঁচিল বা বাড়ির ছাদে অনন্তলতা অহরহ দেখা যায়। লতানো স্বভাবের হওয়ায় যে কোনো বাহন পেলেই অনেকদূর অবধি উঠতে পারে। প্রস্ফুটন প্রাচুর্য দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সব ধরনের বাগানেই এ গাছ আদর্শ। তাছাড়া বিশেষ উদ্যানশৈলীর ক্ষেত্রেও বিভিন্ন নকশায় এ গাছ উপস্থাপন করা যায়।
গাছ লতানো, শিকড় ও কাণ্ড কোনাচে ধরনের, কিছুটা খাঁজকাটা। পাতা তাম্বুলাকৃতির, অমসৃণ ও রোমশ। ৪ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিনারা ঢেউ খেলানো, বিন্যাস একান্তর, শিরা স্পষ্ট, আকর্ষী ও কাক্ষিক।
ফুল ফোটার প্রধান সময় গ্রীষ্মকাল। তবে রেশ থাকে বর্ষা-শরত্ অবধি। পাঁচটি পাঁপড়ি যুক্ত। ফুলের রূপ সহজে ম্লান হয় না।ফুল দেখতে ছোট হলেও বৃত্যাংশ বড় হয়। অনেকেই বৃত্যাংশকেই ফুল বলে ভুল করে থাকে। অন্যান্য দেশে এর প্রকারভেদ থাকলেও আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ও গাঢ় লাল বা গোলাপি রঙের ফুল দেখা যায়। গোলাপি রঙের ফুলের বৃত্যাংশ পাঁচটি ও রঙিন।
একটু দূর থেকে গাছ দেখে মনে হয়, গাছে বুঝি ফল ধরে না। অথচ সারা গাছে ধরা আছে ফল, সবটুকু লুকিয়ে রয়েছে ফুলের ৫ পাঁপড়ির নিচে। অবশ্য সেগুলোকে ঠিক ফুলের পাঁপড়ি বলা যায় না, বৃতিগুলো বেড়ে গিয়ে পাঁপড়ির কাজ করে। বাদামি ফলগুলি এক সেন্টিমিটার লম্বা আর দেখতে সুন্দর মসৃণ, জলের ফোঁটার মতো কিংবা নাশপাতি ফলের মতো, নিচের দিক কিছুটা মোটা, ওপরে ক্রমশ চিকন। এই রূপসী ফলের দেহে লেখা আছে আধুনিক পপকর্ন আর সনাতন খইয়ের ইতিহাস।
প্রত্নত্ত্ববিদরা পপকর্নের যে অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন তা কমপক্ষে ৮০ হাজার বছর আগেকার, অর্থাৎ গুহাবাসীরাও পপকর্নের ব্যবহার জানতো। ৫৬০০ বছর আগেকার মেক্সিকোর বাদুড় অধ্যুষিত গুহায় (Bat Cave) পাওয়া গেছে অনন্তলতার বীজের অস্তিত্ব। প্রাচীনকালে অনন্তলতার খই ছিল এক ধরনের দরকারি খাবার।শুধু খাবার নয়, নানা রকম চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠান্ডাজনিত রোগে অনন্তলতার বেশ ব্যবহার দেখা যায়।
এর বংশবিস্তারের কৌশলের কমতি নেই। বীজগুলো জলে ভাসে, ভেসে চলে যায় দূরে। ডাঙ্গার দেশে পাখিরা খায়, হরিণ, ছাগল জাতীয় প্রাণীরও খাদ্য। খাবারের মাধ্যমে বীজ চলে যায় আরেক জায়গায়। গাছ ধ্বংস হয়ে গেলেও আগুন লেগে ছাই হয়ে যায় চারদিক কিন্তু গাছের নিচের কন্দ আর সাকার-রুট (Succer Root) থেকে নতুন করে জন্ম হয় অক্ষয় অনন্তলতার।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom Plantae
Subkingdom Viridiplantae
Infrakingdom Streptophyta
Superdivision Embryophyta
Division Tracheophyta
Subdivision Spermatophytina
Class Magnoliopsida
Superorder Caryophyllanae
Order Caryophyllales
Family Polygonaceae
Genus Antigonon
Species Antigonon leptopus

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।