Skip to main content

নাগেশ্বর



অন্তর মম বিকশিত করো
অন্তরতর হে।
নির্মল করো উজ্জ্বল করো,
সুন্দর করো হে।
জাগ্রত করো উদ্যত করো
নির্ভয় করো হে।


নাগেশ্বর lndian rose chestnut , Mesua ferrea

নাগেশ্বর
অন্যান্য নাম : নাগেশ্বর, নাগচম্পা
ইংরেজি নাম : Ceylon ironwood, Indian rose chestnut, Cobra's saffron
বৈজ্ঞানিক নাম : Mesua ferrea

“চাইর কোনা পুষ্কুনির পারে চাম্পা নাগেশ্বর
ডাল ভাঙ্গ পুষ্প তুল কে তুমি নাগর।”
দৃঢ়তা, গঠনসৌষ্ঠব, দীর্ঘ জীবন, ফুল ও পাতার সৌন্দর্য এই গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর আদি নিবাস শ্রীলঙ্কা। সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এটি প্রচুর দেখা যায়। সাগর সমতলের ১০০০ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও এটি জন্মাতে পারে। হিমালয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের অনেক স্থানেই নাগেশ্বর সহজলভ্য। হলো শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফুল। ১৯৮৬ সালে এটিকে জাতীয় ফুল বলে ঘোষণা করা হয়।
নাগেশ্বর এক প্রকার শোভাবর্ধক, চিরসবুজ গাছ। পুরো গাছটা পিরামিডের মতো গড়ন, কালচে সবুজ পাতার ঝোপের ভেতর মায়া আর ছায়া দুটোই লুকিয়ে আছে। এই গাছ প্রায় ১০০ ফুট লম্বা হয়। কাণ্ড গোলাকৃতি, সরল, বাকল ধূসর। গাছের গুঁড়ির পরিধি প্রায় ২ মিটার হতে পারে। এদের ডাল বেশ নরম. বাকল ০.৫ ইঞ্চি পুরু এবং লালচে। এদের কাণ্ড থেকে আঠা পাওয়া যায়। এই গাছের কাঠ বেশ শক্ত হয়। কাঠের রঙ লাল। এটি ধীর গতিতে বড় হয়।
সারা বছর নতুন নতুন পাতা গজানো এই গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পাতা সরল, প্রতিমুখ, সরু, মসৃণ, বল্লমাকৃতি, আগা তীক্ষ্ণ, চকচকে ও নিম্নপৃষ্ঠ সাদা আভাযুক্ত। ৭-১৫ সেমি লম্বা। নতুন পাতার রং উজ্জ্বল তামাটে রঙের, বড় হয়ে গাঢ় সবুজ রঙ নেয়। পাতা নিচের দিকে অবনত থাকে। পাতার বিন্যাস এতই ঘনবদ্ধ যে এই গাছ সব সময় ছায়া-সুনিবিড় থাকে।
ফুল সবচেয়ে বেশি ফোটে বসন্তকালে। তবে বর্ষায়ও ফুল ফুটতে দেখা যায়। পাপড়ির রঙ দুধ-সাদা আর গোলাকার মুকুলের রঙ সবজে-সাদা। ফুল চার পাপড়ি বিশিষ্ট ও একটু কোঁকড়ানো। পাপড়ির অগ্রভাগ ভেতর দিকে সাপের ফণার মতো কিছুটা বাঁকানো। মাঝখানে আছে এক থোকা সোনালি রঙের পুংকেশর, যা ফুলের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ফুল উভয় লিঙ্গিক। ফুলের ব্যাস ৪-৭.৫ সেমি হয়। ফুলের বহিচ্ছদ ৪টি এবং দুই সারিতে থাকে। গর্ভকেশরের মস্তক ঢালের মতো। স্বাদে সুমিষ্ট ও সুঘ্রাণ বিশিষ্ট।
ফল ডিম্বাকার, তবে অগ্রভাগ সুচালো, মোচার মতো। ফলের রঙ প্রথমে তামাটে পরে বাদামি। । ফল দৈর্ঘ্য ২.৫-৩ সেমি। ফুল থেকে এক প্রকার আঠা বের হয়। এর বীজ ১-৪টি হয়। বীজের রঙ ধূসর বা বাদামী। সেপ্টেম্বর মাসে ফল হয়।
এই ফুল শুধু সুন্দরী আর সুগন্ধি-ই নয়, একইসঙ্গে বেশ কাজেরও বটে। এই ফুল থেকে যেমন সুগন্ধি আতর তৈরি হয়, তেমনি নানা রোগের চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়। সুগন্ধের জন্য সাবান ও অন্যান্য প্রসাধন দ্রব্যেও এর ব্যবহার আছে। আদিবাসীরা নাগেশ্বরের শুকনো ফুল অরেচক, বমি, রক্ত-আমাশয়, কাশি ও অর্শ রোগ সারাতে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও যকৃৎ ও পাকস্থলীর রোগে, মুত্রকৃচ্ছতায়, শরীরের দুর্গন্ধনাশে ও যৌন উদ্দিপক হিসাবে এর ফুল ব্যবহৃত হয়। মূলের ছাল বাতজ্বরে ও পাতা ঠান্ডা লাগায় কাজে দেয়। নাগেশ্বরের তেল বাতের মালিশে আরাম দেয়। শ্রীলঙ্কায় নাগেশ্বর গাছ 'না' বৃক্ষ বলে পরিচিত। এই গাছের কাঠ খুব শক্ত বলেই এই নামকরণ। এক কালে কাঠের সাঁকো, বাড়ি ইত্যাদি তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হতো। এখন এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা শ্রীলঙ্কায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom- Plantae
Division- Magnoliophyta
Class- Magnoliopsida
Order- Malpighiales
Family- Clusiaceae
Subfamily- Kielmeyeroideae
Tribe- Calophylleae
Genus- Mesua
Species- Mesua ferrea

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।