Skip to main content

কনকচূড়া




কনকচূড়া
ইংরেজি নাম: Yellow Gold Mohur
বৈজ্ঞানিক নাম: Peltophorum pterocarpum
পরিচিতি:
কনকচূড়ার শাখায়িত পত্রমোচি, বড় গাছ। পাতা কালচে সবুজ ও রুক্ষ। প্রধান কাণ্ড খাড়া, ধূসর বর্ণ ও মসৃণ। পাতা দ্বিপক্ষল, যৌগিক। শাখার আগায় দীর্ঘমঞ্জরিতে উজ্জ্বল কমলা ফুল হয়। গ্রীষ্মের শুরুর ফুল খুবই সুন্দর। ফুল উজ্জ্বল কমলা রঙের এবং সুরভিময়, দূর থেকে হলুদ দেখায়। বিরাট দ্বিপক্ষল পাতা, শাখায়িত দীর্ঘ হলুদ পুষ্পমঞ্জরি এবং চ্যাপ্টা তামাটে ফলের প্রাচুর্যতা দিয়ে কনকচূড়া সহজেই চেনা যায়।


|| কনকচূড়া ||
অন্যান্য নাম : কনকচূড়া, স্বর্ণচূড়া, হলুদচূড়া,
ইংরেজি নাম : Yellow poinciana, Copperpod, Yellow gulmohar tree, Yellow Flame Tree, Yellow Jacaranda, Horsebush, Yellow Flamboyant, Rusty shield-bearer, Golden Flamboyant
বৈজ্ঞানিক নাম : Peltophorum pterocarpum
নতুন বাংলা সনের শুরু। সূর্যের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে পরিবেশে রঙের জেল্লা ছড়িয়ে দিচ্ছে এ সময়ের নানা ফুল। কৃষ্ণচূড়া আর শিমুলের লাল, জারুলের বেগুনি আর অমলতাসের সোনালী রঙের পাশে সবুজের পটভূমিতে কনকচূড়ার চোখ ধাঁধাঁনো হলুদ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। যাকে এতদিন রাধাচূড়া ভেবে এসেছি সে যে আসলে কনকচূড়া এবং কৃষ্ণচূড়ার ঘনিষ্ট আত্মীয় তা জেনেছি অনেক পরে। কনকচূড়া আমাদের দেশের নিজস্ব গাছ নয়। এর আদি নিবাস আন্দামান, শ্রীলঙ্কা, মালয় ও উত্তর অস্ট্রেলিয়া। গাছ ও পাতার আকৃতি কৃষ্ণচূড়া গাছের মতোই।
কনকচূড়া বৃহৎ আকৃতির পর্ণমোচি, বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। প্রায় ২০ মিটার উঁচু। কান্ড ধূসর, অমসৃণ, শীর্ষদেশ ডিম্বাকৃতি কিংবা ছত্রাকার, শাখা বহু প্রশাখায় বিভক্ত, ঘনবিন্যস্ত এবং ছায়ানিবিড়। তবে কনকচূড়ার শাখাগুলো কৃষ্ণচূড়ার মতো ছড়ানো নয়, ঊর্ধ্বমুখী এবং সেজন্য গাছগুলো কৃষ্ণচূড়ার চেয়ে খানিকটা উঁচু।
কৃষ্ণচূড়ার সাথে কনকচূড়ার পাতার সাদৃশ্য খুবই স্পষ্ট। অসংখ্য ছোট ছোট, চিকন পত্রক নিয়ে গঠিত এই দ্বিপক্ষল, যৌগিক পাতা আকৃতি ও আয়তনে প্রায় অভিন্ন। অবশ্য সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে দুটি প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য ধরা পড়ে। কনকচূড়ার পাতা কালচে-সবুজ এবং রুক্ষ্ম। কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার পাতা কোমল ও গাঢ় সবুজ। এ ছাড়া কৃষ্ণচূড়ার পত্রিকাগুলো ছোট এবং অধিকতর ঘনবিন্যস্ত। কনকচূড়ার যৌগপত্র লম্বায় ৩০-৫০ সেমি এবং চওড়ায় ২০-৩০ সেমি। প্রতি পাতা ৮-২৬ টি পক্ষ নিয়ে গঠিত। প্রতি পক্ষে ২০-৪০ টি পত্রক থাকে। পত্রকগুলি ডিম্বাকার, আকারে ক্ষুদ্র, ৮-২৫ মিমি লম্বা ও ৪-১০ মিমি চওড়া। পত্রকের উপরিভাগ কালচে সবুজ, নিচ সাদাটে। শীতের শেষে সব পাতা ঝরে গেলে বিবর্ণ ডালপালায় প্রাণের কোনো চিহ্নই থাকে না। আবার বসন্তের প্রথম ভাগে নতুন পত্রপল্লবে সুশোভিত হতে শুরু করে গাছগুলো।
নতুন পাতা গজানোর পর চৈত্রের শেষ ভাগেই ফুটতে শুরু করে কনকচূড়ার ফুল। এরপর পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়েই ফুলের অব্যাহত প্রস্ফুটন চোখে পড়ে। তবে বর্ষাকালে কয়েক বার বিক্ষিপ্তভাবে ফুল ফোটে। কনকচূড়ার ফুল উজ্জ্বল কমলা রঙের; দূর থেকে দেখায় হলুদ। গাঢ় সবুজ নিবিড় সন্নিবেশিত পাতার ওপর হলুদ রঙের প্রলেপের মতো ফুলগুলোর প্রচুর প্রস্ফুটন রোদ ঝলমলে গ্রীষ্মের দিনে রুক্ষ পরিবেশে লাবণ্যের পরশ বুলিয়ে দেয়। শাখার আগায় দীর্ঘ, ঊর্ধ্বমুখী, ৩০-৫০ সেমি লম্বা শাখায়িত মঞ্জরিতে গাঢ় হলুদ ফুল হয়। পাপড়ির সংখ্যা ৫ টি, মুক্ত, কোঁচকানো, ১৫-১৮ সেমি লম্বা। পুংকেশর ১০টি, কমলা রঙের, অসমান। গর্ভকেশর উজ্জ্বল সবুজ। ফুল মৃদু সুগন্ধি। ফুলের সুগন্ধ দূরবাহী হওয়ায় গাছের শাখায় শাখায় মৌমাছিরা ভিড় করে।
ফুল শেষ হতে না হতেই গুচ্ছ গুচ্ছ ফলে গাছ ভরে ওঠে। কনকচূড়ার ফল শিমের মতো, কৃষ্ণচূড়ার ফলের মতো বিশালাকৃতির নয়। ফল হয় অজস্র। ফলগুলি শক্ত, চ্যাপ্টা, ৫-১০ সেমি লম্বা এবং ২-৩ সেমি চওড়া ও তামাটে রঙের। Peltophorum অর্থ ঢালবাহী; ঢালের মতো ফলের আকৃতির জন্য এই নামকরণ। প্রতি ফলে ৯ মিমি লম্বা এবং ৪ মিমি চওড়া, শক্ত, হলদেটে বীজ থাকে ১-৬টি। বীজ থেকে খুব সহজেই চারা হয়।
কনকচূড়া মূলত সৌন্দর্য বর্ধক ছায়াতরু হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঠ তেমন দামী নয়, সারাংশ আসবাবপত্রে ব্যবহার্য। গাছের ছাল থেকে আমাশয়, ব্যথা ও ক্ষতের ওষুধ তৈরি হয়ে থাকে। চোখের চিকিৎসায়, দাঁতের মাজন তৈরিতে এবং প্রাকৃতিক রঙ প্রস্তুতিতেও এর ছাল ব্যবহৃত হয়। তবে শুধু ফুলের সৌন্দর্যের জন্যই কনকচূড়া প্রিয় হয়ে আছে বহুজনের কাছে।
|| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ||
Kingdom Plantae
Subkingdom Viridiplantae
Infrakingdom Streptophyta
Superdivision Embryophyta
Division Tracheophyta
Subdivision Spermatophytina
Class Magnoliopsida
Superorder Rosanae
Order Fabales
Family Fabaceae
Genus Peltophorum
Species Peltophorum pterocarpum

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।