Skip to main content

নাগলিঙ্গম




নাগলিঙ্গম
বৈজ্ঞানিক নাম: Couroupita guianensis
পরিচিতি:
বিশাল বা সুউচ্চ নাগলিঙ্গম গাছের কান্ড বেশ মোটা। উচ্চতায় গাছটি প্রায় ৮০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর গুচ্ছ পাতাগুলো লম্বায় সাধারণত ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪-৫ ইঞ্চি চওড়া। পাতার রং গাঢ় সবুজ। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং পরে নতুন করে গজায়।
গুনাগুন:
ভেষজ গুণসম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়।


নাগলিঙ্গম
অন্যান্য নাম : নাগলিঙ্গম, ভূত ফুল, কামান গোলা, শিব কামান, হাতিফল।
ইংরেজি নাম : Cannon Ball Tree
বৈজ্ঞানিক নাম : Couroupita guianensis
“শুধু আমার জন্য আনা
একশ দুইটি লাল টুকটুকে নাগলিঙ্গম হাতে দিয়ে
সে বলেছিল আজ তবে আসি”
বিলুপ্ত প্রায় নাগলিঙ্গম গাছের ফুলগুলি অদ্ভুত সুন্দর। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। হয়তো এ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। কথিত আছে নাগলিঙ্গম গাছের ফুল ও ফল একান্তই নাগ-নাগিনীর সম্পদ। যদিও বাস্তবে এঁর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। নাগলিঙ্গম ত্রিনিদাদ ও ল্যাটিন আমেরিকায় বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ এলাকায় এর আদি নিবাস। ভারতে এ বৃক্ষের দেখা মেলে আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। ক্রমশ তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করে। বৌদ্ধদের মন্দিরেও এই ফুলের যথেষ্ট কদর আছে। এ কারণেই থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে নাগলিঙ্গম গাছ রোপন করা হয়। চারা রোপনের ১২ থেকে ১৪ বছর পর নাগলিঙ্গম গাছে ফুল ধরে।
চিরসবুজ এ উদ্ভিদটি প্রায় ৭৫-৮০ ফুট উঁচু হয়। ১১৫ ফুটও উঁচু হতে দেখা যায়। গোড়ার ব্যস প্রায় ১৮ ফুট। দ্রুত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গম গাছের বাকলের রং ধূসর এবং অসমান।
নাগলিঙ্গমের পাতা বেশ বড় ও চওড়া। গুচ্ছ পাতাগুলো লম্বায় সাধারণত ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা এবং থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। পাতার রং গাঢ় সবুজ। কচি পাতার রঙ ম্লান সবুজ। বছরে কয়েকবার পাতা ঝরানো এ গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সব পাতা ঝরে পড়ার পর একইভাবে নতুন পাতাও গজাতে শুরু করে।
পাঁপড়ি, রেণু, ফুলের গঠন নাগলিঙ্গমকে দিয়েছে অভূতপূর্ব স্বকীয়তা। গ্রীষ্মে ফুল ধরা শুরু হয়। বসন্তের শেষ থেকে প্রায় শরৎকাল অবধি ফুল ফোটে। বেশির ভাগ উদ্ভিদের ফুল শাখায় ফুটলেও নাগলিঙ্গমের ফুল ফুটে গাছের গুঁড়িতে। গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হয় ২-৭ ফুট লম্বা মঞ্জরী। তারপর শত শত ফুল। ফুলভর্তি গাছ দেখলে মনে করতেই পারেন, কেউ বুঝি গাছের কাণ্ড ছিদ্র করে ফুলগুলোকে গেঁথে দিয়েছেন। ফুলগুলো কমলা, উজ্জ্বল লাল বা গোলাপি বর্ণের সেই সাথে হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ। ফুলের এই বিচিত্র গড়ন আমাদের দেশে বিরল। ৬টি পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের ব্যাস ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি। পাপাড়িগুলো বাঁকানো এবং পুরু। ফুলের পরাগচক্র বিশেষ ধরনের। ফুলে দু ধরনের পরাগচক্র থাকে। একটি নিষেকে সক্ষম, হলুদ রঙের, আকারে ছোট ও যা গর্ভচক্রকে ঘিরে থাকে। অপরটি নিষেকে অক্ষম, বেগুনি রঙের, বাঁকানো, সাপের ফণার মতো এবং বড় আকৃতির। এ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যও সেরা। কী দিন, কী রাত, নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা আপনাকে কাছে টানবেই। এর পরাগায়ণও বাতিক্রমধর্মী। মূলতো মৌমাছি পরাগায়ণে বাহক হিসেবে কাজ করে।
ফল গোলাকার, কামানের গোলার মত দেখতে। ২০-৩০ সে.মি ব্যাসযুক্ত। প্রতি গাছে ৫০-১৫০ টি করে ফল থাকে ।দ্বিস্তরের পুরু আবরণে ঢাকা। একটি ফলের ভেতর ৬৫-৫৫০টি পর্যন্ত বীজ থাকতে পারে। ফল পরিপক্ক হতে প্রায় এক বছর সময় নেয়। কখনোবা ১৮ মাস! পরিপক্ক ফল মাটিতে পড়লে ফেটে যায়। বাতাসে খানিকটা ঝাঁঝালো গন্ধ সৃষ্টি হয়। বীজগুলোতে চুলের মত আস্তরণ থাকে যা এদেরকে প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করে। ফলগুলো প্রচণ্ড শক্ত ও আকারে বেশ বড় হওয়ায় নাগকেশর গাছ রাস্তার পাশে রোপণ করা হয় না, কেননা এর পরিপক্ক ভারী ফল যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ভেষজ গুণ সম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়। আমেরিকার আমাজান অঞ্চল ও ভেনিজুয়েলার আদিবাসীরা নাগলিঙ্গম ফলের খোসাকে এক সময় বাসন হিসেবে ব্যবহার করত বলে জানা যায়। এর কাঠ থেকে আসবাবও তৈরি হয়। আমাদের জন্য এ ফল অখাদ্য হলেও আমাজান বনের সামান জনগোষ্ঠীর কাছে এটি একটি প্রিয় খাবার! তাদের বিশ্বাস পুরুষত্ব বৃদ্ধিতে নাকি এ ফল বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে! হাতির পেটের পীড়ায় এই গাছের কচিপাতা ওষুধ হিসেবে খাওয়ানো হত, এ কারনেই হয়ত এর আরেক নাম হাতিফল বা হাতির জোলাপ।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom - Plantae
Subkingdom - Tracheobionta
Superdivision - Spermatophyta
Division - Magnoliophyta
Class - Magnoliopsida
Subclass - Dilleniidae
Order - Lecythidales
Family - Lecythidaceae
Genus - Couroupita
Species - Couroupita guianensis

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।