Skip to main content

চন্দ্রমল্লিকা মাশরুম



আমার মা বাঙাল বাড়ির মেয়ে। কিন্তু ১৫ বছরেরও কম বয়সে বিয়ে হয়ে এবাড়িতে চলে আসায় ঘটি পরিমণ্ডলের প্রভাবে তাঁর কথার টান, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি সব ঘটিদের মতো হয়ে যায়। ছেলেমানুষ মেয়ের কচি মনে পরিবর্তনগুলি মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়েছিল। আমি জন্মাবধি মাকে দু'একবার ছাড়া কোনোদিন বাঙাল কথা বলতে শুনিনি। তবে বাঙাল হওয়ার অহংকার তাঁর কম ছিলনা।

মায়ের তুলনায় আমার বাঙাল স্ত্রী একটু বেশি বয়সে এবাড়িতে আসেন। অর্থাৎ বেশিদিন তিনি বাপের বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। বয়স এবং বেশি দিন বাপের বাড়িতে থাকা ---- এই দুইয়ে তাঁর বাঙাল প্রভাব কাটতে সময় লেগেছিল বেশি। এখনো তিনি 'ভাতের হাঁড়ি' না বলে বলেন 'ভাতের হাড়ি।' ভালো করে ছিটকিনি বলতে পারেন না, মনে হয় যেন সিটকানি বললেন।
আমার শ্বশুরমশাই ও শাশুড়ি বাড়িতে বাঙাল টানে কথা কইতেন। এবং তা বুঝতে আমার বেশ বেগ পেতে হতো। আনাজ-সবজি কিনে এনে বলতেন, তরকারিগুলো তুলে নাও। আমরা জানি সবজি রান্নার পরই 'তরকারি' হয়।
ছিপ ফেলে মাছ ধরার বঁড়শি বলতে আমরা বুঝি একটি লোহার বাঁকানো কাঁটা। ওঁরা বঁড়শি বলতে গোটা যন্ত্রটি বোঝাতেন।
আবার মায়ের মুখে শুনেছি, একদিন কার্তিক মাসের রাতে ঠাকুমা তাঁকে ডেকে বলছেন, বৌমা, নিবটা দাওতো। মা-তো দিশাহারা। এত রাতে নিব নিব কি হবে! কারোকে চিঠি লিখবেন কি? তাহলে তো এখনই দোয়াত কলমও চাইবেন। উদ্ভ্রান্তের মতো নিব খুঁজতে লাগলেন।
শেষে জানা যায় উনি লেপ চাইছিলেন। ঘটি টানে লেপ হয়েছে নেপ, নেপ আবার কথ্যে অপভ্রংশ হয়ে হয়েছে নিব!!!
আমরা বলি ভাতের ফেন গালতে হবে। ওঁরা বলেন, মাড় গালতে হবে।
ফেন হোক বা মাড়, জিনিসটি একটু শুকিয়ে গেলে কেমন সাদা থকথকে জেলির মতো হয়ে যায়। আমাদের রান্নাঘরের ভাঙা নর্দমার মধ্যে সেরকম আধ শুকনো ফেন দিয়ে অপূর্ব সব ভাস্কর্য তৈরি হয়ে থাকতো। আমি কতদিন তা বসে বসে দেখেছি। ঝাঁটার কাঠি দিয়ে তার ওপর লিখেছি, ছবি এঁকেছি।
শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে অবিকল সেই ভাতের ফেনের জমে যাওয়া এই ভাস্কর্যটি আসলে একটি মাশরুম। এর নাম স্নো মাশরুম বা হোয়াইট জেলি মাশরুম। বৈজ্ঞানিক নাম Tremella fuciformis.
পল এডওয়ার্ড স্ট্যামেটস নামে বিখ্যাত এক আমেরিকান মাশরুম বিশারদ দু'খানি বই লিখেছেন, যার একটির নাম উঠতি ভোজনরসিক (Growing Gourmet). বইটিতে তিনি এই মাশরুমের নাম দিয়েছেন চন্দ্রমল্লিকা মাশরুম (Chrysanthemum Mushroom).
তিনি এই মাশরুমের চাষ থেকে শুরু করে নানান উপাদেয় পদ রান্না করার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।
সে যাক। এই জেলি মাশরুম আসলে একটি প্যারাসাইটিক ইস্ট, যা বড় পাতা কোনো মরা গাছের ভিজে গুঁড়িতে জন্মায়। কোঁচকানো ঝালর দেওয়া পোশাকের মতো গড়নই এর বৈশিষ্ট্য।
চীন ও জাপানে এটি খাদ্য ও ওষুধের কাঁচামাল হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এদেশে এখনো তেমন চল হয়নি।

Comments

Popular posts from this blog

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত