Skip to main content

Rangan, রঙ্গন, Ixora, Jungle geranium (Ixora coccinea)



Rangan, রঙ্গন, Ixora, Jungle geranium (Ixora coccinea)

রঙ্গন/রুক্সিনী
বৈজ্ঞানিক নাম : Ixora coccinea
পরিচিতি:
গুল্ম জাতীয় শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ। ফুলটি আমাদের উপমহাদেশের। রঙ্গন তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ফুল আকারে ছোট, নলাকৃতি। গাছের আকৃতি ঝোপালো, শাখা-প্রশাখা ছড়ানো, পাতা সবুজ। বাগানের শোভা বর্ধনে রঙ্গন ফুল ও গাছের ভূমিকা অতুলনীয়। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুতে ফোটে, তবে বর্ষায় বেশি, অন্যান্য ঋতুতে কম। প্রায় প্রতি শাখার অগ্রভাগে থোকা থোকা ফুল ফোটে, থোকায় থাকে অসংখ্য মঞ্জুরি। রঙ্গন সাদা, লাল গোলাপিসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে উৎপাদিত রঙ্গনের বেশিরভাগই লাল।


|| রঙ্গন ফুল ||
অন্যান্য নাম : রঙ্গন, রুক্মিনী, রক্তক, বন্ধুক, ঈশ্বর।
ইংরেজি নাম : Burning Love, Jungle Flame, Jungle Geranium, Flame of the woods, West Indian Jasmine.
বৈজ্ঞানিক নাম : Ixora coccinea
রঙ্গন আমাদের অতি পরিচিত একটি ফুলের নাম। শহর বা গ্রাম প্রায় সবার কাছেই শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে এই ফুল পরিচিত। আকর্ষণীয় রূপ ও বর্ণের বৈচিত্র্যে এই উদ্ভিদ ঐশ্বর্যমণ্ডিত। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বিশেষত দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস এবং থাইল্যান্ডেও এ গাছ প্রচুর দেখা যায়। রঙ্গনের অপর নাম রুক্মিনী হিন্দু দেবীর নামের থেকে প্রাপ্ত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে রঙ্গন ফুলের জনপ্রিয়তা লক্ষণীয়। চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষে বৌদ্ধরা রঙ্গনের থোকা থোকা ফুল, ডাল, পাতা সংগ্রহ করে ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। বৌদ্ধরা এই ফুলকে বিযু ফুল বলে জানে।
রঙ্গন ঘন চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যা ১.২ – ২ মি. পর্যন্ত উঁচু হয়। কিন্তু অনেক সময় ৩ – ৩.৫ মি. পর্যন্ত উঁচু হতেও দেখা যায়। গাছের আকৃতি ঝোপালো, শাখা-প্রশাখা ছড়ানো, পাতা সবুজ। গাছের কান্ড ও শাখা প্রশাখা বেশ শক্ত মানের।
রঙ্গনের পাতার ঘন বিন্যাস অপূর্ব। পাতা সরল, উপবৃত্তাকার বা আয়তকার, স্থুলাগ্র, কিনারা অখন্ড। পত্রবিন্যাস অসর্পিল, অভিমুখ তির্যকপন্ন। কচি পাতা বাদামি রঙের হলেও পরিণত পাতা গাঢ় সবুজ রঙের, চকচকে, মসৃণ এবং চর্মবৎ। পাতাগুলি সাধারণত ১০ সেমি লম্বা ও ৫ সেমি চওড়া। উপপত্র দুটি বৃন্তের মাঝে অবস্থিত।
ঘন ঝোপ আকৃতির রঙ্গন গাছের সবুজ পাতার ফাকে থোকা থোকা লাল রঙ্গের ফুল ভারি দৃষ্টি নন্দন ও মনোরম। ফুলের সৌন্দর্য সহজেই সকলের নজর কাড়ে। রঙ্গন সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষা ঋতুতে ফোটে, তবে বর্ষায় বেশি, অন্যান্য ঋতুতে কম। কিন্তু কোন কোন জাতের রঙ্গন বসন্তেও ফোটে। রঙ্গন লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপিসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে উৎপাদিত রঙ্গনের বেশিরভাগই লাল। সাদা রঙের রঙ্গন ফুলে রয়েছে মৃদু সুগন্ধ এবং এ জাতের আদি নিবাস সিঙ্গাপুর। প্রায় প্রতি শাখার অগ্রভাগে থোকা থোকা ফুল ফোটে। রঙ্গন গাছে ফুল ফোটার আগে অসংখ্য ঊর্ধ্বমুখী মঞ্জরী দেখতে পাওয়া যায়। ৫ – ১৩ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট মঞ্জরী ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হয়ে তারকা খচিত থোকা ফুলে পরিণত হয়। এক একটি মঞ্জরীতে প্রায় ১৫ – ৫০ টি ফুল থাকে। ফুল আকারে ছোট, নলাকৃতি। নলের দৈর্ঘ্য ৫ সেমি। প্রতি ফুলে পাপড়ি থাকে ৪টি। তারার মতো প্রায় ১ সেমি ব্যাস যুক্ত চারটি পাপড়ির বিন্যাস সত্যিই মনোমুগ্ধকর। ফুলে পুংকেশর থাকে চারটি যা দলের সাথে যুক্ত থাকে। ফুলের মাঝে ক্ষুদ্র আকৃতির দ্বিখন্ডিত গর্ভমুন্ড বিশিষ্ট একটি গর্ভকেশর অবস্থিত। লাল রঙের ফুলগুলির মধ্যে হঠাৎ কিছু কিছু সোনালি বা ঘিয়ে রঙের ফুলের উপস্থিতিও দেখা যায়। ফুটন্ত রঙ্গন ফুলের সৌন্দর্য অনেক দিন স্থায়ী থাকে।
রঙ্গনের ফল খুব ছোট, প্রায় গোলাকার, কমবেশি ৫ মিমি ব্যাস যুক্ত এবং শাঁসালো। কচি ফল সবুজ রঙের, পাকলে বেগুনি বা লালচে রঙের হয়। প্রতি ফলে একটি করে বীজ থাকে। রঙ্গন খুব কষ্টসহিষ্ণু গাছ। এর চাষ পদ্ধতিও সহজ। ফল থেকে চারা জন্মানো যায়। আবার পরিণত গাছের ডাল নিচ থেকে কেটে মাটিতে রোপণ করে বা জোড় কলম ও গুটি কলম করেও রঙ্গনের বংশবিস্তার করা যায়।
শুধু শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসাবেই নয় ভেষজ গুণসম্পন্ন গাছ হিসাবেও রঙ্গনের যথেষ্ট কদর রয়েছে। প্রচলিত, লোক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এর ফুল, পাতা, কান্ড ও মূল নানাভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা ক্ষুধামান্দ্য, স্বরভঙ্গ, চর্মরোগ, ক্ষত নিরাময়, ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানি রোগে ব্যবহার করা হয়। ফুল উচ্চরক্তচাপ, মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক স্রাব ও যৌনাঙ্গের সংক্রমনে কাজে লাগে। আমাশয়, উদরাময় ও ক্ষত নিরাময়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করা মূল বুবহৃত হয়। পাতার পুলটিস মচকানো ব্যথা, কালশিটে পড়া, একজিমা ও ফোড়া নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রঙ্গনের পাকা ফল অনেকে খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে।
|| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ||
Kingdom : Plantae
Subkingdom : Viridiplantae
Infrakingdom : Streptophyta
Superdivision : Embryophyta
Division : Tracheophyta
Subdivision : Spermatophytina
Class : Magnoliopsida
Superorder : Asteranae
Order : Gentianales
Family : Rubiaceae
Genus : Ixora L.
Species : Ixora coccinea


ফুলের নাম- রঙ্গন
বৈজ্ঞানিক নাম- Ixora coccinea
পরিবার- Rubiaceae
অন্যান্য নাম- Ixora, Rugmini रुग्मिनी (Hindi), Vedchi (Tamil), Flame of the Woods, Jungle Flame, Jungle Geranium, Chethi (Malayalam)
ফুল ফোটার সময়- সারাবছর ফুলের রঙ- লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপী, মিশ্র। রঙ্গন আমাদের এশীয় প্রজাতি। ২-২.৫ মি উচু, ঝোপালো, চিরসবুজ, পত্রনিবিড় গাছ। অজস্র ডালপালা। পাতা বিন্যাসে বিপ্রতীপ, বোঁটাহীন, ৪-৮ সেমি লম্বা। প্রায় সারা বছরই বড় বড় ছত্রাকার থোকায় ডালের আগায় সিঁদুর লাল ফুল। ফুল ছোট, দলনল সরু, ২.৫ সেমি লম্বা, পাপড়ি চোখা। কলম ও শিকড় থেকে গজানো চারায় চাষ।
লালচে ফুলের একটি ভ্যারাইটি I. lancasterii, থোকায় ৩০-৪০টি ফুল। I. rosea হচ্ছে গোলাপী রঙ্গন, পাতা আকারে সামান্য বড়। I. lutea হচ্ছে হলুদ রঙ্গন। I. arborea হচ্ছে সাদা রঙ্গন, গাছ প্রায় ৩-৪ মি উচু, ১০-১৫ সেমি লম্বা পাতা, উজ্জ্বল সবুজ পাতার গাছের আগায় সাদা সুগন্ধি ফুলের বড় বড় থোকা। I. singaporensis কে সিঙ্গাপুরী রঙ্গন বলে, ফুলের থোকা বেশ চওড়া, প্রায় ১৫-১৮ সেমি, ফুলের রঙ কমলা লাল। I. chinensis কে চীনা রঙ্গন বলে, গাছ খাটো, লাল ফুলের থোকায় গাছ ভরে থাকে, গোলাপী আর হলুদ রঙের ফুল ও পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র- ফুলগুলি যেন কথা
ছবি- নেট

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত