Skip to main content

Krishnachura, কৃষ্ণচূড়া, Royal Poinciana (Delonix regia)

Image result for Royal Poinciana (Delonix regia)
Krishnachura, কৃষ্ণচূড়া, Royal Poinciana (Delonix regia)


|| কৃষ্ণচূড়া ||
অন্যান্য নাম : কৃষ্ণচূড়া, গুলমোহর, গুলমো্‌র, রক্তচূড়া
ইংরেজি নাম : Royal Poinciana, Flamboyant, Flame tree, Peacock Flower
বৈজ্ঞানিক নাম : Delonix regia
“কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে
আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে”
প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে ঠিক তখনই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিতে নিজের সবটুকু রং ছড়াতে শুরু করে কৃষ্ণচূড়া। ধরিত্রী যেন পায় প্রাণ। বসন্ত রাঙিয়ে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার রংয়েই। নীল আকাশের ক্যানভাসে দিগন্তে যেন আগুন জ্বলে। বনে বনে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে জ্বালিয়ে দেয় বিদ্রোহের আগুন, বিপ্লবের আগুন, প্রেমের আগুন।
“কৃষ্ণচূড়া আগুন তুমি আগুন ঝরা বাণে
খুন করেছ শূন্য তোমার গুণ করেছ গানে”
কেবল আনন্দানুভূতির সঙ্গেই নয়, কৃষ্ণচূড়া কখন যেন জড়িয়ে গেছে আমাদের চেতনার অনুষঙ্গে। ফুলটিকে তাই বিদেশি বলে ভাবতেই বরং বিস্ময় জাগে। গাছটি আমাদের দেশে সহজপ্রাপ্য হলেও আদি নিবাস আফ্রিকার মাদাগাস্কার। কৃষ্ণচূডা মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। ১৮২৪ সালে সেখান থেকে প্রথম মরিশাস, পরে ইংল্যান্ড এবং শেষাবধি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার ঘটে। বর্তমানে ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। ডেলোনিক্স গ্রিক শব্দ, অর্থ দৃশ্যমান থাবার মতো। সম্ভবত কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ির বৈশিষ্ট্যেই নামটি অর্থবহ। ‘রিজিয়া’ অর্থ রাজকীয়। নামের এ অংশে কৃষ্ণচূড়ার ঐশ্বর্য পরিস্ফুট।
“গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী,
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী”
কৃষ্ণচুড়া মাঝারি আকৃতির শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ছাতাকৃতির বৃক্ষ জাতীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ। কৃষ্ণচূড়া গাছ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ৮ - ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চলব্যাপী ছড়ায়। শাখা প্রশাখার অগ্রভাগ নিম্নমুখি এবং নরম প্রকৃতির। ঝড়ে এ বৃক্ষের ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। এ বৃক্ষের কান্ডের রং কিছুটা ধুসর বর্ণের। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।
“তুমি আমার আলোর নেশা বিভোর ভোরময়
কৃষ্ণচূড়া তুমি আমার প্রেমের পরিচয়”
শুধু ফুল নয়, পাতার ঐশ্বর্যেও কৃষ্ণচূড়া অনন্য। এই পাতার কচি সবুজ রঙ এবং সূক্ষ্ম কারুকর্ম আকর্ষণীয়। নম্র, নমনীয় পাতাদের আন্দোলন দৃষ্টিশোভন। এ গাছে পাতার নিবিড়তা নেই, তবু রৌদ্রশাসনে সক্ষম। কৃষ্ণচুড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। পাতা দ্বিপক্ষল, ৩০-৬০ সে মি পর্যন্ত লম্বা, ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। পত্রকগুলি ক্ষুদ্র, ১ সে মি লম্বা। দেশে শীত-গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে যায় অনেকটাই। প্রায় পত্রহীন গাছে গাছে বড় বড় থোকায় থোকায় জাপটে আসে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল। তখন গাছে অল্প পরিমাণই পাতা থাকে। কিন্তু লাল ফুলের মাঝে পাতাগুলো মিলিয়ে যায়। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।
“আজ, কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে আকাশ খেলে হোলি
কেউ জানে না সে কোন কথা মন কে আমি বলি”
গ্রীষ্মের খরাদীর্ণ আকাশের নিচে প্রচণ্ড তাপ ও রুক্ষতায় কৃষ্ণচূড়ার আশ্চর্য প্রস্ফুটনের তুলনা নেই। নিষ্পত্র শাখায় প্রথম মুকুল ধরার অল্প দিনের মধ্যেই সারা গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। এত উজ্জ্বল রঙ, এত অক্লান্ত প্রস্ফুটন তরুরাজ্যে দুর্লভ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার প্রজাতিভেদে ফুল লাল, কমলা, হলুদ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে এবং তার রেশ চলতে থাকে বর্ষার শেষ পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। কৃষ্ণচূড়ার প্রস্ফুটিত ফুলের ব্যাস ২ থেকে ৩ ইঞ্চি। বৃতির বহিরাংশ সবুজ। ভেতরের অংশ রক্তিম। বৃত্যাংশের সংখ্যা ৫টি। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো ৫টি পাপড়িযুক্ত। ৫ পাপড়ির একটি বড় ও তাতে হলুদ বা সাদা দাগ। পাপড়ি প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে। ভেতরে একটি হলুদ গর্ভকেশরকে ঘিরে থাকে ১০টি গাঢ় লাল পুংকেশর। একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে, কৃষ্ণের মাথায় চুলের চূড়া বাঁধার ধরনটির সঙ্গে ফুলটির বেশ মিল। সেখান থেকেই হয়ত কৃষ্ণচূড়া নামকরন। তবে নাম যাই হোক না কেন কৃষ্ণচূড়ার ফুলের বর্ণনা লেখায় দেয়া সম্ভব নয়। সত্যিকার সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়ার ফুলের কাছে গেলে কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা সম্ভব। কে জানতো দেখতে লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ির উপরেও প্রকৃতি পরম মমতায় কি সুন্দর নকশা করে রেখেছে! এক অলস বিকেলে হয়তো কোনো পথিক তুলে নেবে, দেখবে, মুগ্ধ হবে - এই তার পরম তৃপ্তি, এই সামান্য মুদ্ধতার জন্য প্রকৃতির কত না অসামান্য আয়োজন! কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার আগে কলি দেখতে মোহরের মতো দেখায় তাই হিন্দিতে এই ফুলকে বলা হয় গুলমোহর।
“আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা
একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়_ ফুল নয়, ওরা
শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং”
কৃষ্ণচূড়া শিম জাতীয় উদ্ভিদের গোত্রভুক্ত, তাই ফলের সঙ্গে চ্যাপ্টা শিমের সাদৃশ্য স্পষ্ট। অবশ্য ফলগুলি আকারে শিমের চেয়ে বহুগুণ বড়, ৪০-৬০ সে মি লম্বা এবং ৫ সে মি চওড়া। কৃষ্ণচূড়ার কচি ফলগুলি সবুজ, তাই পাতার ভিড়ে সহজে দেখা যায় না। শীতের হাওয়ায় পাতা ঝরে গেলেই ফল চোখে পড়ে। পাকা ফল গাঢ় ধূসর ও কাষ্ঠকঠিন। প্রতিটি ফলে প্রায় ১৫-৫০টি ২ সে মি লম্বা বাদামী রঙের বীজ থাকে। নিষ্পত্র কৃষ্ণচূড়ার শাখায় যখন ফল ছাড়া আর কিছুই থাকে না তখন তাকে শ্রীহীন দেখায়। বসন্ত শেষে কৃষ্ণচূড়ার দিন ফেরে, একে একে ফিরে আসে পাতার সবুজ, প্রস্ফুটনের বহুবর্ণ দীপ্তি, নিঃশব্দে ঝরে পড়ে বিবর্ণ ফলগুলি। কৃষ্ণচূড়া আবার দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে।
“গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়
বনে বনে শাখায় শাখায়।
কেন যায় কেন যায়
বাহারের মন ভেঙ্গে যায়”
অর্থনৈতিক দিক থেকে এ গাছ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় জ্বালানী কাঠ হিসেবে অধিক ব্যবহূত হয়। এছাড়াও ছায়াপ্রদানকারী গাছ হিসেবে ও শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর বীজ থেকে প্রাপ্ত আঠা ওষুধ শিল্পে বাইন্ডার রূপে ব্যবহার করা হয়। ফল থেকে নানাপ্রকার শৌখিন দ্রব্য প্রস্তুত হয়। বীজ গয়না শিল্পে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
“এই সেই কৃষ্ণচূড়া যার তলে দাঁড়িয়ে
চোখে চোখ হাতে হাত কথা যেত হারিয়ে”
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom Plantae
Subkingdom Viridiplantae
Infrakingdom Streptophyta
Superdivision Embryophyta
Division Tracheophyta
Subdivision Spermatophytina
Class Magnoliopsida
Superorder Rosanae
Order Fabales
Family Fabaceae
Genus Delonix
Species Delonix regia
“তুমি তো দিয়েছিলে মোরে কৃষ্ণচূড়া ফুল
আমি তো বসেছিলাম নিয়ে শুধু গানের সুর,
তুমি তো দিয়েছিলে মোরে কৃষ্ণচূড়া ফুল
চলে গেছ কোথায় আমায়
ফেলে বহুদূর…….”

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও ...

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত...

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।