
Gondhoraj, গন্ধরাজ, Gardenia (Gardenia jasminoides)
গন্ধরাজ
বৈজ্ঞানিক নাম: Gardenia jasminoides
পরিচিতি:
চিরসবুজ এ গাছ প্রায় ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। স্বভাবে এরা ঝোপাল, ডালপালাগুলো আঁটসাঁট ও শক্ত ধরনের। কখনো কখনো গোড়া থেকেও ডালপালা গজায়। পাতার রঙ চকচকে সুবজ। ৭ থেকে ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফুলের মৌসুম বসন্ত থেকে শুরু করে একেবারে বর্ষা-শরত্ অবধি বিস্তৃত। ফুলের গোড়ার দিকটা নলাকার, মুক্ত পাপড়িগুলো দুধসাদা রঙের, ডাবল ও কয়েক সারি। বাসিফুল ও পরাগধানি হলুদ রঙের। এ ফুলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরও সুগন্ধ থেকে যায় অনেক দিন।
|| গন্ধরাজ ফুল ||
অন্যান্য নাম : গন্ধরাজ, গুলচন্দ।
ইংরেজি নাম : Gardenia, Cape jasmine, Bush Gardenia, Bunga Cina, Danh-danh
বৈজ্ঞানিক নাম : Gardenia jasminoides
ইংরেজি নাম : Gardenia, Cape jasmine, Bush Gardenia, Bunga Cina, Danh-danh
বৈজ্ঞানিক নাম : Gardenia jasminoides
“খদ্দরের সবুজ রঙের চাদরে ঢাকা সংকীর্ণ লোহার খাট ঘরের প্রান্তে দেয়াল-ঘেঁষা। নারায়ণী স্কুলের তাঁতে-বোনা শতরঞ্চ মেঝের উপর পাতা। একধারে লেখবার ছোটো টেবিলে ব্লটিং প্যাড; তার একপাশে কলম-পেনসিল সাজানো দোয়াতদান, অন্যধারে পিতলের ঘটিতে গন্ধরাজ ফুল।” – চার অধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আকাশের শরীরে লেপটে আছে কালো শাড়ি। চারিদিকে অফুরান প্রাণের উৎসব। নানান বাহারি ফুলে ছেয়ে রয়েছে চারপাশ। রিমঝিম-রিমঝিম বৃষ্টি আর ফুলের গন্ধ একাকার হয়ে বাতাসে ভাসতে থাকে। এভাবে বর্ষায় ফোটা যে ফুলগুলোর নজরকাড়া সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়-মনকে নাড়া দিয়ে যায় তাদের মধ্যে অন্যতম হল গন্ধরাজ ফুল। গন্ধরাজ বাংলার এক সুপরিচিত ফুল। যাদের শৈশব-কৈশোর গ্রামে কেটেছে তাদের সুখ-স্মৃতিতে এই ফুলের সুগন্ধ দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকবে। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এগাছ চোখে পড়ত। আজকাল ঠিক ততটা না হলেও কিছু কিছু গাছ দেখা যায় পুরনো বাড়িগুলোতে। সহজলভ্যতা, পুষ্পপ্রাচুর্য এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে এই ফুল গ্রামেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গাছটি গঠন বিন্যাস ও ফুলের সুগন্ধের জন্য সর্বই সমাদৃত।
গন্ধরাজ ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম Gardenia jasminoides। গার্ডেনিয়া শব্দটির উদ্যানের (গার্ডেন) সাথে মিল থাকলেও এর উৎস অন্যত্র, স্কটল্যান্ডের বংশোদ্ভূত আমেরিকান প্রকৃতিবিদ ড. আলেক্সান্ডার গার্ডেনের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলেশিয়া ও ওশিয়ানিয়ার ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ পুষ্পল গাছ এটি, প্রায় আড়াইশো রকমের প্রজাতি পাওয়া যায়। গন্ধরাজ আমাদের পরিবেশে এমনভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে যে এ ফুল একদা চীন থেকে এসেছে তা বিশ্বাসই হয় না। এটি পাকিস্তানের জাতীয় ফুল। গন্ধরাজ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। গাছের দৈর্ঘ্য সাধারনত ২-৮ ফুট হয় তবে প্রায় ১০-১২ মি অবধি লম্বা হতে পারে। স্বভাবে ঝোপালো, ডালপালাগুলো আঁটোসাটো ও শক্ত ধরনের। কখনো কখনো গোড়া থেকেও ডালপালা গজায়।
গন্ধরাজ চিরহরিৎ গাছ। পাতা লম্বায় ৩ - ৬ ইঞ্চি চওড়ায় ১ - ১.৫ ইঞ্চি অবধি হয়, বিপরীত জোড়ে গজায়। পাতা বল্লমাকার, কিনারা মসৃণ। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ ও উপরিতল তেলতেলে।
গন্ধরাজ ফুল পবিত্রতা, ভদ্রতা প্রভৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোলাপের মতো দেখতে বলে শ্বেতগোলাপ নামেও পরিচিত। ফুল ফোটার সময় বসন্ত থেকে শুরু করে একেবারে বর্ষা-শরৎ অবধি বিস্তৃত। শাখার অগ্রভাগ বা কক্ষ থেকে এককভাবে ফুল ফোটে। ছয় থেকে বারোটি পাপড়িতে বিন্যস্ত থাকে গন্ধরাজ। ফুলের পাঁপড়িগুলি একস্তর(সিঙ্গেল), দুই স্তর (সেমি ডাবল), বা বহুস্তরে (ডাবল) বিন্যস্ত থাকে। ফুলের গোড়ার দিকটা নলাকার, মুক্ত পাপড়িগুলো দুধসাদা রঙের। ফুলের ব্যাস ২ থেকে ৪.৭ ইঞ্চি হয়। পরাগধানি হলুদ রঙের। ফোটা ফুল পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত টাটকা থাকে। ফোটার সময় সাদা থাকলেও ক্রমে হাল্কা হলুদ বর্ণ ধারণ করে এই ফুল। এই ফুলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য—ফুল শুকিয়ে যাবার পরও সুগন্ধ থেকে যায় অনেকদিন। এ ফুলের গন্ধ একেবারেই স্বতন্ত্র। বিশেষত রাতের অন্ধকারে গন্ধের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।
ফুল থেকে ক্রমে ফল জন্মায়। ফল কচি অবস্থায় সবুজ পাকলে কমলা বা লালচে কমলা রঙের। আকারে ০.৫ – ১.৫ ইঞ্চি লম্বা, ডিম্বাকার এবং মাংসল। ফলের গায়ে ছয়টি উঁচু শিরার মত থাকে ফলে ফলটি দেখতে ষড়ভুজাকৃতি মনে হয়। ফলে অনেক বীজ থাকে। বীজ চ্যাপ্টা, ডিম্বাকার ও গাঢ় লাল বা লালচে হলুদ রঙের। বীজ বা কলম দ্বারা নতুন চারা তৈরী করা হয়।
এ ফুল থেকে প্রসিদ্ধ আতর হয়। গন্ধরাজের মূল স্নায়বিক সমস্যা, মাথার যন্ত্রণা জ্বর ও বদহজমে ব্যবহার করা হয়। পাতার পুলটিস জ্বরের উপশমে লাগানো হয়। গন্ধরাজের ফল জন্ডিস, বৃক্ক ও ফুসফুসের রোগ নিরাময়ে এবং খাদ্যের রং তৈরিতে কাজে লাগে। এটা প্রমানিত যে ফল থেকে পাওয়া রঙের রঞ্জক ক্ষমতা কেশর এর থেকে বেশি। এছাড়াও গন্ধরাজ ফলে রয়েছে ক্রোকেটিন নামক রাসায়নিক উপাদান যা চোখের রেটিনার বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভাবে কার্যকর। চৈনিক বিভিন্ন চিকিৎসায় ও ওষুধ প্রস্তুতিতে গন্ধরাজ বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয়।
“একদিন চুল কাটতে যাব না সেলুনে
একদিন নিদ্রাহীন চোখে পড়বে ধুলো।
একদিন কালো চুলগুলো খ'সে যাবে,
কিছুতেই গন্ধরাজ ফুল ফুটবে না।”
একদিন নিদ্রাহীন চোখে পড়বে ধুলো।
একদিন কালো চুলগুলো খ'সে যাবে,
কিছুতেই গন্ধরাজ ফুল ফুটবে না।”
|| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ||
Kingdom : Plantae
Subkingdom : Viridiplantae
Infrakingdom : Streptophyta
Superdivision : Embryophyta
Division : Tracheophyta
Subdivision : Spermatophytina
Class : Magnoliopsida
Superorder : Asteranae
Order : Gentianales
Family : Rubiaceae
Genus : Gardenia
Species : Gardenia jasminoides
Subkingdom : Viridiplantae
Infrakingdom : Streptophyta
Superdivision : Embryophyta
Division : Tracheophyta
Subdivision : Spermatophytina
Class : Magnoliopsida
Superorder : Asteranae
Order : Gentianales
Family : Rubiaceae
Genus : Gardenia
Species : Gardenia jasminoides
Comments
Post a Comment