Skip to main content

বন ওকড়া




বন ওকড়া
অন্যান্য নাম : বন ওকড়া, বন ওকড়, আটলেরা, ঘামেলা, বৌঠুরানী, জংলী ঘাগরা, বেলাজ গোটা, নাগেজী
ইংরেজি নাম : Caesarweed, Aramina Plant, Burr Mallow, Cadillo, Caesarweed Aramina, Chinese Burr, Congo Jute, Hibiscus Burr, Indian Mallow, Pink Burr
বৈজ্ঞানিক নাম : Urena lobata
আকাশ কালো করে মেঘেরা আসে। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে গাঁয়ে। প্রকৃতিতে সবুজের প্রলেপ বুলিয়ে দেয় বর্ষা। মাঠে, জঙ্গলে, বাগানে। শীত আর গ্রীষ্মের অত্যাচারে এতদিন যেসব নাম-পরিচয়হীন গুল্মলতার বীজ মাটির গভীরে শুয়েছিল। এখন তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সময়। সবুজে সবুজে ছয়লাপ হয়ে যাবে বন, প্রান্তর, নদী-খাল-বিলের কিনারগুলো। সবুজের সেই উৎসবে যোগ দেবে আমাদের বন ওকড়া। তারপর শীতের শেষ পর্যন্ত তাদের রাজত্ব। তবে তার সৌন্দর্য দেখতে হলে বের হতে হবে খুব ভোরে কারণ রোদের তেজ যত বাড়বে বন ওকড়ার দ্যুতি তত ম্লান হবে।
বন ওকড়া বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষন করেন। তবে ধারনা করা হয় এর আদি নিবাস সম্ভবত এশিয়া। বর্তমানে এটি এশিয়া, ক্রান্তীয় আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ বিশ্বের প্রায় সকল আর্দ্র ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। সারা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়, মাঠে, পথের দুপাশে, নদীর কিনারে, পতিত জমিতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। শক্তপোক্ত চেহারার এই গাছ, রোদ-ছায়া কিছুই মানে না। যেকোনও গুল্ম-লতার সাথে পাল্লা দিয়ে এরা বেঁচে থাকতে পারে। তাই সারা দেশে এর এত বাড় বাড়ন্ত।
বন ওকড়া ঝোপালো গাছ, একেবারে গোড়া থেকেই প্রচুর ডালপালা বের হয়। গাছটি প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে তবে সাধারণত ৩-৪ ফুট উঁচু হয়। কাণ্ড ধূসর সবুজ। গোড়ার দিকে কাণ্ড তিন-চার ইঞ্চি মোটা। কাণ্ড ও ডালপালা বেশ শক্ত, নিরেট, গাঢ় সবুজ কিংবা বাদমী রংয়ের এবং রোমে আবৃত। বাকলের ভেতরে ডালের মূল কাঠামোটা সাদা রংয়ের এবং কাণ্ডের ঠিক মাঝখানে সবুজ জেলির মতো থকথকে এক ধরনের পদার্থ থাকে।
বন ওকড়ার পাতার রং সবুজ। পাতা বড়, সরল, একান্তর বিন্যাসযুক্ত এবং কিনারা খাঁজকাটা। বন ওকড়ার পাতার ধরণ দুরকম। পূর্ণাঙ্গ গাছের কাণ্ডের সাথে যে পাতাগুলো সরাসরি যুক্ত সেগুলো এবং ডালের গোড়ার দিকের পাতাগুলির ফলক কর্তিত, ৫-৭ ভাগে বিভক্ত। এই পাতার ব্যাস ৪-৫ ইঞ্চি। কিন্তু ডালের আগার দিকে যেসব পাতা থাকে সেগুলো উপবৃত্তাকার। এসব পাতা আকারেও ছোট। বোঁটার গোড়া থেকে পাতার শীর্ষ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২.৫ থেকে ৩ ইঞ্চি। প্রস্থ দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। বোঁটার দৈর্ঘ্য ২-৫ সেমি।
বন ওকড়ার ডালের শেষ প্রান্তের প্রতিটা পাতার গোড়ায় একটা করে ফুল ফোটে। ফুলের রং সাদাটে গোলাপি। দেখতে কিছুটা গোলাপি জবা ফুলের মতো। তবে আকারে খুব ছোট। ফুলের ব্যাস এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার। পাঁচটি পাতলা পাপড়ি থাকে। পাপড়ির ঠিক মাঝখানে থাকে জবাফুলের মতো কেশর। ফুলের তুলনায় কেশর বেশ লম্বা। এক সেন্টিমিটার। কেশরের গায়ে থাকে গাঢ় গোলাপি রঙের স্পষ্ট পরাগরেণু । এগুলোও জবাফুলের রেণুর মতো।
বন ওকড়ার ফল বিশেষ আকর্ষণীয় বস্তু। ফল গোলাকারও নয়, আবার চৌকোনাও বলা চলে না। এর মাঝামাঝি আকারের। ফল ছোট। বন ওকড়ার কাঁচা ফল সবুজ রংয়ের, পাকলে বাদামী। ফলের ব্যাস বড়জোর ১ সে মি। ফল ৫টি কক্ষে বিভক্ত। প্রতি কক্ষে ত্রিকোণাকার একটি করে বীজ থাকে। ফলের গায়ে আংটাকৃতির শুঙ্গ থাকে। কাঁচা অবস্থায় অবশ্য তার গুরত্ব নেই। কিন্তু পেকে যাওয়ার পর বীজের বিস্তারে এই শুঙ্গগুলি মুখ্য ভূমিকা নেয়। বন ওকড়ার শুকনো ফল অজান্তেই আটকে যায় আমাদের কাপড়ে-শরীরে অথবা অন্য কোন লোমশ জন্তুর দেহে এবং ছড়িয়ে পড়ে দূর দুরান্তে। শরতকালে বনওকড়া গাছে ফল আসা শুরু করে। শীতের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হয়। শীতের শেষ দিকে বনওকড়ার গাছ শুকিয়ে মারা যায়। বর্ষাকালে মাটিতে ঘুমিয়ে থাকা বীজ থেকে নতুন চারা গজায়।
বন ওকড়া যথেষ্ট ভেষজ গুণ সম্পন্ন এবং আমাদের দেশীয় চিকিৎসায় নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। বন ওকড়ার শিকড় মূত্রবর্ধক, এছাড়া কোমর ও বাতের ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, গয়টার, লিউকোরিয়া, টনশিলের ব্যথা এবং বদহজম নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। কান্ড ও মূল এর ক্বাথ বায়ুশূল উপশমে কার্যকরী। ফুল শুষ্ক কাশি এবং গলা ব্যথায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাতা ফোড়া, ক্ষত ও চর্মরোগের উপশমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাতা ও মূল এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ব্যথা, ডায়েরিয়া, আমাশয়, গণোরিয়া এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom: Plantae
Phylum: Spermatophyta
Subphylum: Angiospermae
Class: Dicotyledonae
Order: Malvales
Family: Malvaceae
Genus: Urena
Species: Urena lobata

Comments

Popular posts from this blog

কুঞ্জলতা

|| কুঞ্জলতা || অন্যান্য নাম : কুঞ্জলতা, কামলতা, তারালতা, তরুলতা, গেইট লতা, সূর্যকান্তি, জয়ন্তী ফুল। ইংরেজি নাম : Cypress Vine, Cypressvine Morning Glory, Cardinal Creeper, Cardinal Climber, Cardinal Vine, Star Glory, Hummingbird Vine, Cupid's flower বৈজ্ঞানিক নাম : Ipomoea quamoclit কুঞ্জলতা একপ্রকার বর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ক্রান্তীয় আমেরিকা হলেও এটি দুনিয়ার প্রায় সকল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং আমাদের দেশেও ব্যাপক ভাবে এর দেখা মেলে। কুঞ্জলতা সাধারণত ১-৩ মিটার লম্বা হয়। কান্ড নরম সবুজ, সহজেই ভেঙে যায় তবে পরিনত হলে বাদামি রঙের ও তুলনায় পোক্ত হয়ে থাকে। এর কান্ড বল্লী ধরনের অর্থাৎ এদের কোন আকর্ষ থাকে না তাই কান্ডের সাহায্যে কোন অবলম্বন কে জড়িয়ে ওপরে ওঠে। কুঞ্জলতার পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। পাতা সরল, একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতাগুলি ৫ – ৭.৫ সেমি লম্বা। পত্রকিনারা পালকের মতো গভীরভাবে খন্ডিত, পাতার প্রত্যেক পাশে ৯-১৯টি করে খন্ড থাকে। এরূপ খন্ডনের কারনে পাতাগুলিকে দেখতে লাগে অনেকটা ফার্ণের মত। ঘনভাবে লতানো কুঞ্জলতার পাতাও

ডেইজি

ডেইজি বৈজ্ঞানিক নাম : Bellis perenni পরিচিতি: দেখতে সাদা, মাঝখানে হলুদ ছোট ছোট অসংখ্য পাপড়ি দিয়ে একটি চোখের মতো আকৃতি তৈরি করে। ডেই ডেইজি ফুলটি ভোর থেকেই ফোটে, একে বলা হয় “দিনের চোখ”। গুনাগুন: এর অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেমন খাদ্য হিশেবে ডেইজি ফুলের পাতা সালাদের সাথে খাওয়া যায়, এর পাতার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। ওষুধি গুনের দিক থেকে রক্তক্ষরণ কমানো, বদহজম এবং কফ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। মৌমাছি ডেইজি ফুল খুব ভালবাসে এবং মধু তৈরিতে ভাল ভুমিকা রাখে।

সোনাঝুরি

সোনাঝুরি A cluster of flowers at the end of the blooming season. Acacia auriculiformis Family Fabaceae Khoai near Shantiniketan, West Bengal, India আকাশমণি অন্যান্য নাম : আকাশমণি, সোনাঝুরি ইংরেজি নাম : Auri, Earleaf Acacia, Earpod Wattle, Northern Black Wattle, Papuan Wattle, Tan Wattle বৈজ্ঞানিক নাম : Acacia auriculiformis আকাশমণি একটি দ্রুতবৃদ্ধিসম্পন্ন চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয় প্রজাতি। চিরসবুজ এই বৃক্ষটি ১৫-৩০মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কান্ড বহু শাখাপ্রশাখা যুক্ত। গাছের বাকল পরিণত অবস্থায় ছাই, বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের এবং অমসৃণ ও ফাটল যুক্ত হয়। এই গাছের যেটাকে আমরা অনেকেই পাতা বলি সেটি আসলে পাতা নয়, এটি মূলত পর্ণবৃন্ত। বীজ অঙ্কুরিত হবার পর পক্ষল যৌগিক পত্র ধারণ করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পত্রকগুলি ঝরে পড়ে। এর পর যৌগিক পত্রের বৃন্ত পরিবর্তিত হয়ে প্রসারিত, চ্যাপ্টা পাতার মত আকার ধারণ করে ও পাতার মত কাজ করে। সবুজ পর্ণবৃন্তগুলি ৮-২০ সেমি লম্বা ও ১-৪ সেমি চওড়া এবং মসৃণ। প্রতি পর্ণবৃন্তে ৩-৮ টি সমান্তরাল ভাবে অবস্থিত